ফ্যাসিস্টের দোসররা ইসিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করছে কি না জানতে চেয়েছে বিএনপি: রিজভী

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) [ফ্যাসিস্টের] দোসররা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করছে কি না বিএনপি তা জানতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, 'সিভিল প্রশাসনেও অনেক ঘটনা দেখছি। সেটাই আমাদের জানতে চাওয়ার ছিল। [ফ্যাসিস্টের] দোসররা এখানে কী ধরনের অবস্থান করছে, তারা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করছে কি না-এগুলো তাদেরকে প্রশ্ন করেছি।'
রবিবার (৩১ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে দুই নির্বাচন কমিশনারের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ বলেন।
এদিন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইসি ভবনে আসেন বিএনপির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটির সদস্য সচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ।
তবে বিএনপির প্রশ্নের জবাবে ইসি কী বলেছে, তা খোলাসা করেননি রহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, বর্তমান ইসি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। সেই ক্ষেত্রে এই মুহুর্তে আমি তাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে দায়িত্বে থাকা ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের কাছে জানতে চেয়েছি, অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের বিষয়ে তো আমাদের এখনও সংশয় রয়েছে। আসলে এটা কতটুকু হওয়া সম্ভব বা কতটুকু করা যায়। এই নির্বাচন কমিশনের সেই সক্ষমতা রয়েছে কি না
তিনি বলেন, 'সেই বিষয়গুলো আমরা জানতে চেয়েছিলাম। তবে তারা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির কথা বলেছেন।'
রিজভী আরও বলেন, 'আমরা এও জানি যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্তরে [ফ্যাসিস্টের] দোসররা বসে আছে। তারা নানাভাবেই একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে বিঘ্নিত হয়, [নির্বাচন] না করা যায় সেজন্য নানা ধরনের কলাকৌশল এবং সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তারা।'
তিনি বলেন, 'ইসি তো একটা প্রশাসন; যদিও এটা একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি, তবে এটা রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন সত্তা।'
তিনি আরও বলেন, 'সর্বক্ষেত্রে, আপনার সিভিল প্রশাসন বলুন সেখানেও যেমন রয়েছে, অনেক ঘটনা দেখছি অনেক কিছুই হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সেটাই জানতে চাওয়া ছিল যে, দোসররা এখানে কি ধরনের অবস্থান করছে। তারা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে কি না। এগুলো আমরা তাদেরকে প্রশ্ন করেছি।'
রিজভী বলেন, ' [ইসি] তিনি বলেছেন, না তারা সবকিছু বিবেচনা করে, সবকিছু দেখেশুনে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, কোন ধরনের কোন কালিমা যাতে লিপ্ত না হয়, সে ব্যাপারটা তারা সুচারুভাবে দেখছেন। একটা অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি দরকার ইসি সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।'
সে ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে বলেও জানান রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, 'আমরা এসেছিলাম ইসির সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমরা দুজন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা জানতে এসেছি, প্রবাসীদের ভোটের কি অবস্থা এবং তারা ভোট দিতে পারবে কি না এবং তাদের অগ্রগতি কেমন। আমরা উনাদের বক্তব্য শুনলাম, পোস্টাল ব্যালোটের মাধ্যমে তাদের ভোট হতে পারে এটা নিয়ে তারা কাজ করছেন '
তিনি আরও বলেন, 'তাছাড়া সংসদীয় আসন নির্ধারণের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী উনারা আমাদের এগুলো জানালেন। আমরা সামগ্রিকভাবে তাদের প্রস্তুতি কতটুকু সেই বিষয়টা জানতে এসেছি। উনাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সেটা আমাদেরকে বলেছেন '
পিআর পদ্ধতি নিয়ে কিছু দলের দাবি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এই মুহূর্তে করার জন্য যে কাজগুলি করা দরকার, সেই পদক্ষেপগুলো ইসি গ্রহণ করছেন। সাংবিধানিক যে দায়িত্ব ইসির ওপর প্রদত্ত হয়েছে সেই অনুযায়ী তাদের যে কাজগুলো সেই কাজগুলো তারা করে যাচ্ছেন। আমরা মূলত তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানার জন্য এসেছিলাম। আরপিওতে বিধিবদ্ধ যে বিধানগুলি আছে এবং বিধিবদ্ধ যে আইনগুলো রয়েছে সেই আইনগুলো দিয়েই জনগণের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হওয়া প্রয়োজন।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের ব্যাপারে গত ১৬ বছরে যে আস্থাটা উঠে গেছে, সেই আস্থাটি নিশ্চিত করার বিষয়ে তারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই বিএনপি নেতা বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা পরিচিতি আছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তার মতো একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার ওপর যেভাবে আক্রমণ হয়েছে, এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা কখনোই একটা গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং দলের মহাসচিব তারা বলেছেন যে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা এর সঙ্গে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। একটা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত যারা দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।'