চাকসু নির্বাচনে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক, পজিটিভ হলে প্রার্থিতা বাতিল

৩৫ বছর পর আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলাফল পজিটিভ হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত আচরণবিধিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, 'মনোনয়ন ফর্ম নেওয়ার সময় প্রার্থীরা ডোপ টেস্টের জন্য একটি কার্ড পাবেন। ওই কার্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নমুনা জমা দিয়ে টেস্ট করাতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে মেডিকেলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ফলাফল কমিশনের কাছে পাঠাবেন। ডোপ টেস্টের ফি বহন করবে প্রার্থী।'
এছাড়া, চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালাও প্রকাশ করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, দাখিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং দাখিলের সময় কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশী সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে আসতে পারবেন না। মনোনয়নপত্র দাখিল এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় অন্য কোনো প্রার্থী বা ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা অন্য কোন সংগঠনের কেউ কোনো প্রকার বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। ডোপ টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে।
নির্বাচনে যানবাহন ব্যবহার
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাদান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ইত্যাদি নিয়ে কোনরূপ শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করতে পারবে না। এছাড়া, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে বা ভোটকেন্দ্র হতে ভোটারদের আনা-নেয়ার জন্য কোনো প্রকার যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি নির্বাচনের দিন চিফ রিটার্নিং অফিসার/রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহন (স্টিকারযুক্ত গাড়ি/যানবাহন) নির্বাচনী এলাকায় চলাচল করতে পারবে। স্টিকারসহ যানবাহন চলাচলের বিষয়টি প্রক্টর অফিস তত্ত্বাবধান করবে।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা
প্রার্থীগণ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান দিনের ২৪ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা করতে পারবেন। প্রতিদিন প্রচারের সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে রাত ৯টার পরে কোনো ধরনের প্রচারকার্যে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। বহিরাগত (ভোটার ও প্রার্থী ব্যতীত) কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না। ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা যাবে না।
অনলাইন/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার
আইনসিদ্ধ ইতিবাচক পদ্ধতিতে অনলাইন/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে। দেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় ও প্রচারপত্রে কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, গুজব, মানহানিকর আচরণ, অশালীন উক্তি ও উস্কানিমূলক কোন কথা কিংবা কোন অসত্য তথ্য ছড়ানো যাবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোন বক্তব্য ব্যবহার করা যাবে না।
নির্বাচনী সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো সভা/সমাবেশ/শোভাযাত্রা করতে চাইলে দিন, সময় ও স্থান উল্লেখপূর্বক চিফ রিটার্নিং অফিসার/সংশ্লিষ্ট হলের অফিসারের নিকট হতে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এ ব্যাপারে প্রক্টরকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে। প্রার্থী নিজের সাদাকালো ছবি ব্যতীত লিফলেট বা হ্যান্ডবিল-এ অন্য কারো ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। সভা/সমাবেশ/শোভাযাত্রা করার অনুমতি অন্তত ২৪ ঘণ্টা পূর্বে গ্রহণ করতে হবে। একজন প্রার্থী বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে ১টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি প্রজেকশন মিটিং করতে পারবে।কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো সংগঠন হলের অভ্যন্তরে বা ক্যাম্পাসে চিফ রিটার্নিং অফিসার/রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত স্থান ব্যতীত কোনো সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে পারবে না। নির্বাচনী কার্যক্রম চলাকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অবশ্যই নিজ নিজ পরিচয়পত্র বহন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে,শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ, পরীক্ষার হলে, ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। প্রতিপক্ষের সভা/সমাবেশ, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান ব্যাহত বা পণ্ড হতে পারে বা গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো বহিরাগত কোন আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবে না।
পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ও দেয়াল লিখন
নির্বাচনী প্রচারণায় শুধুমাত্র নিজের ছবি সংবলিত সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পোস্টারের আকার অনধিক ৬০ সে.মি. বাই ৪৫সে.মি এর বেশি হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হল এলাকায় অবস্থিত কোনো প্রকার স্থাপনা, দেয়াল, যানবাহন, বেড়া, গাছ-পালা, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না।
অনুদান, খাদ্য পরিবেশন ও উপঢৌকন প্রদান এবং পোশাকে প্রচারণা
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো সংগঠন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নির্বাচনকে লক্ষ্য করে বা কেন্দ্র করে বছর ব্যাপী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো শিক্ষার্থী/সংগঠন/কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা, অনুদান, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি করতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচার চলাকালে ও নির্বাচনের দিন ভোটারদের কোনোরূপ পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করা যাবে না।
উস্কানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণ
নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র বা সংগঠনকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান, গুজব ছড়ানো বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উস্কানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য প্রদান করা বা গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা যাবে না। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা ভোটারকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বলপ্রয়োগ ও ভোটদানে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
প্রচারণার মেয়েদের হলে এবং ছেলেদের হলে প্রবেশাধিকার
নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে ছেলে প্রার্থী/শিক্ষার্থীরা মেয়েদের হলে ও মেয়ে প্রার্থী/শিক্ষার্থীরা ছেলেদের হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে শুধুমাত্র প্রজেকশন সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে পারবে।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার
ভোটাররা নিজ নিজ হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবে।নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাঁদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয় পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ছবি তুলতে পারবেন। তবে ভোটকেন্দ্রের বুথসমূহে প্রবেশ করতে পারবেন না। উল্লিখিত সকলকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে পূর্বেই পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। বুথ ব্যতীত ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে লাইভ সম্প্রচার চালাতে পারবেন। উল্লেখ্য এক সাথে একই সময় টিভি চ্যানেলের দুইজন এবং সংবাদমাধ্যম কর্মীদের একজন ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সকল মাধ্যম বন্ধ সংশ্লিষ্ট স্থানে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস জমা রাখতে হবে। বুথের অন্তরে কোনোভাবেই এ ধরনের কোন ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না বা কোন প্রকার ছবি তোলা যাবে নয়।
ভোট কেন্দ্রে অবস্থান
ভোটাররা নিজ নিজ হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবে।ভোটদানের পর ভোটারদের অবিলম্বে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। ভোটদানের উদ্দেশ্যে ভোটের লাইন ব্যতীত ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে জটলা তৈরি করা যাবে না এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান থাকতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সকল মাধ্যম বন্ধ রাখতে হবে। বুথের অভ্যন্তরে কোনোভাবেই এ ধরনের কোন ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না বা কোনো প্রকার ছবি তোলা ও ভিডিও করা যাবে না।
বহিরাগত প্রবেশ
নির্বাচনের দিনে ভোটার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত ক্যাম্পাসে অন্য সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
ভোটার স্লিপ প্রদান
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটার স্লিপ প্রদান করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে ভোট কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনোভাবেই ভোটার স্লিপ বিতরণ করা যাবে না।
বিস্ফোরক, দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন
নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন চলাকালে বিস্ফোরক, দেশি অস্ত্র (লাঠিসোঁটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি) ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ দেশীয় অস্ত্র বা অন্য কোন আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না।
নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনবোধে স্বপ্রণোদিতভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাাও গ্রহণ করতে পারবে। কোন প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থীতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যে কোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবে।