সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী সাহারাকে বহিষ্কারের নিন্দা ১৬২ নাগরিকের

সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ট্রান্সজেন্ডার নারী শিক্ষার্থী সাহারা চৌধুরীকে আজীবন বহিষ্কার আদেশের নিন্দা জানিয়েছেন ১৬২ জন নাগরিক। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে তাকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ আগস্ট রাতে ফেসবুকে এন্টার্কটিকা চৌধুরী নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসকে বিষয়বস্তু করে দুটি কার্টুন ক্যারিকেচার প্রকাশ করা হয়। এগুলো প্রকাশের পর ড. সরোয়ার ও আসিফ মাহতাব অ্যাকাউন্টটি সাহারা চৌধুরীর বলে দাবি করেন এবং তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সাহারা চৌধুরীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। এরপর সাহারা চৌধুরীও নিরাপত্তাহীনতা এবং হুমকির মুখে ড. সরোয়ার ও আসিফ মাহতাবসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও বলা হয়, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিগত কয়েক বছর ধরে ড. সরোয়ার ও আসিফ মাহতাবের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি গোষ্ঠী লাগাতার ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে ঘৃণা ছড়িয়ে তাদের হত্যাযোগ্য এবং অচ্ছুৎ করে তুলছেন। এই সংঘবদ্ধ বিমানবিকীকরণের ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে মজলুম এই মানুষগুলো আরও লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। শিক্ষক পরিচয়কে ব্যবহার করে সমাজে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিভেদ ছড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশাকেও তারা কলুষিত করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট কারণ দর্শানো ছাড়াই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর চাপে গত ১৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহারা চৌধুরীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে। আমরা জানতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম অগ্রাহ্য করায় সাহারাকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো? যদি কোনো নিয়ম তিনি অগ্রাহ্য করে থাকেন, সেটার শাস্তি আজীবন বহিষ্কার কি না? বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কি না? প্রতিনিয়ত সহপাঠীদের দ্বারা হুমকির শিকার হওয়া সাহারার মানসিক স্থিতি বিবেচনা করা হয়েছিল কি না?
বিবৃতিতে নাগরিকেরা বলেন, অভ্যুত্থানপরবর্তী সরকার নানাবিধ সংস্কৃতি, জাতি ও লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের প্রতি যথাযথ সহমর্মিতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি কখনো কখনো এটিও প্রতীয়মান হয়েছে যে নতুন সরকার পিতৃতান্ত্রিক ও ধর্মপরিচয় ব্যবহারকারী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট। তারপরও আমরা মনে করি ঘৃণার বিষবাষ্প সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ার আগেই, বাংলাদেশে সব নাগরিকের পরিচয়, বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে সম্মান করে সহাবস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে উল্লিখিত দাবিগুলো হলো-
- অবিলম্বে সাহারা চৌধুরীর আজীবন বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে তাকে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যায়তনে ভিন্ন পরিচয়ের মানুষদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।
- রাষ্ট্রকে সব প্রান্তিক, লিঙ্গীয় সংখ্যালঘু মানুষের জীবনের স্বতন্ত্র পরিচয়ের সাংবিধানিক অধিকার প্রদান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি রক্ষায় কার্যকর জেন্ডার সংবেদনশীল আচরণবিধি প্রণয়ন করতে হবে ও তা অনুসরণ করতে হবে।
- আসিফ মাহতাব উৎস ও ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনের লাগাতার অসংবেদনশীল আচরণ এবং সমাজে বিভেদ ও ঘৃণা ছড়ানোর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও লেখক আজফার হোসেন, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, শিক্ষক মানস চৌধুরী, লেখক ও অধিকার কর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ প্রমুখ।