ফেব্রুয়ারির আগেই তৃতীয় টার্মিনাল চালু করতে চায় বেবিচক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত তৃতীয় টার্মিনাল চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে এখনো রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরিত হয়নি।
বেবিচকের একাধিক সূত্র আজ (১৬ আগস্ট) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে এবং এক মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে টার্মিনালের কিছু যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশের ওয়ারেন্টির মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে। এটি নিয়ে বেবিচকের ভেতরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক সদস্য বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি আগামী জাতীয় নির্বাচনের [ফেব্রুয়ারির] আগেই তৃতীয় টার্মিনাল চালু করতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এটি সম্ভব। অনেক যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে, তাই আর্থিক ক্ষতি এড়াতে দ্রুত চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে।'
আগের ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ যাত্রীসেবা চালু হওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে ৯৯.৮৮ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে বেবিচকের নতুন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তাফা মাহমুদ সিদ্দিক ৭ আগস্টের ব্রিফিংয়ে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি। তিনি জানান, খুব দ্রুত টার্মিনাল চালু করার কাজ চলছে এবং জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনা শেষে চুক্তি সই হবে।
জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, সুমিতোমো করপোরেশন, সোজিৎস এবং নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট করপোরেশন নিয়ে গঠিত ওই কনসোর্টিয়াম টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনা করবে আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকবে বেবিচক।
ইতিমধ্যে ৪ আগস্ট বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট প্রথমবারের মতো তৃতীয় টার্মিনালের যাত্রী বোর্ডিং ব্রিজ (পিবিবি) ও ভিজ্যুয়াল ডকিং গাইডেন্স সিস্টেম (ভিডিজিএস) ব্যবহার করেছে। বিমান জানিয়েছে, এটি টার্মিনালের কার্যক্রম প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বিমানবন্দর সূত্রও জানিয়েছে, বোর্ডিং ব্রিজসহ বিভিন্ন পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে।
টার্মিনাল ২৪ ঘণ্টা সচল রাখতে চার শিফটে প্রায় ৬ হাজার জনবল নিয়োগ দিতে হবে। এর মধ্যে নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকবেন ৪ হাজার জন। যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সেবার দায়িত্ব প্রথম দুই বছর বিমানের হাতে থাকবে, কনসোর্টিয়াম তদারকি করবে। তথ্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে বেবিচক।
বেবিচক চেয়ারম্যান মোস্তাফা বলেন, 'এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তৃতীয় টার্মিনাল চালু করা। যোগদানের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। সবার স্বার্থ রক্ষা করেই দ্রুত চালুর চেষ্টা করছি। এখন সবার দৃষ্টি তৃতীয় টার্মিনালের দিকে, তাই এটিই আমার প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ।'
টার্মিনালটি চালু হলে বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা প্রায় তিনগুণ হবে। বর্তমানে বিমানবন্দর বছরে আট মিলিয়ন যাত্রী ও পাঁচ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডল করতে পারে। নতুন টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হলে যাত্রী ধারণক্ষমতা বাড়বে বছরে ২৪ মিলিয়ন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন সরকার টার্মিনালের প্রাথমিক উদ্বোধন করে। তখন পূর্ণাঙ্গ চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ২০২৪ সালে।
কিন্তু ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিবর্তন, প্রকল্প নেতৃত্বে ঘন ঘন পরিবর্তন এবং বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভিভিআইপি টার্মিনালের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহে দেরির কারণে সময়সূচি পেছাতে থাকে।
বর্তমানে জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চলমান আলোচনার কারণেও পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন বিলম্বিত হচ্ছে।