গ্যাসের চাপ বাড়াতে, পুরোনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে ৮,০৬৯ কোটি টাকার প্রকল্প তিতাসের

কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি ও গাজীপুর সদর উপজেলা এলাকায়—গ্যাসের চাপ বাড়াতে বিদ্যমান পুরোনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করতে ৮,০৬৯ কোটি টাকার প্রকল্প নিচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। প্রকল্পের আওতায়, ২ হাজার ৭৮১ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা সম্পন্ন হলে, দেশের প্রধান তিন শহর এলাকায় গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি বছরে ৭৬৭ কোটি টাকা মূল্যের গ্যাসের সিস্টেম লস কমবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদি সাড়ে পাঁচ বছর ধরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তিতাস বলছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর এলাকায় গ্যাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। প্রকল্পের আওতায়, পুরোনো এই পাইপলাইনের বেশিরভাগটাই প্রতিস্থাপন করা হবে নতুন পাইপলাইন বসিয়ে।
পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হলে শহরগুলোর গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি, স্বল্প চাপ পরিস্থিতির নিরসন করার মাধ্যমে গ্রাহকদের উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া, গ্যাস লিকেজজনিত অপচয় কমানো, দূর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং কার্বন নিঃসরণ কমবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
যানজট মোকাবিলা প্রধান চ্যালেঞ্জ
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর শহর এলাকার বেশিরভাগ প্রধান প্রধান সড়কই কাটতে হবে, সড়কের মধ্যে নতুন পাইপ রাখার পাশাপাশি পুরাতন পাইপ তুলেও রাখতে হবে। পাইপ প্রতিস্থাপন শেষে সড়কগুলো সংস্কার ও মেরামত করতে হবে। এতে শহরগুলোজুড়ে সৃষ্ট সম্ভাব্য যানজট কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, সেটিই সরকারের জন্য বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাস্তা কর্তনের জন্য সৃষ্ট জনদুর্ভোগ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে, বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে তার রূপরেখা প্রকল্পের ডিপিপি'তে অন্তর্ভুক্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। একইসঙ্গে কোনও এলাকায় পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের কাজ শুরুর আগেই যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা রেখে পাইপলাইন স্থাপনের জন্য এলাকা নির্বাচন করার পাশাপাশি রাস্তা কর্তন, পাইপলাইন প্রতিস্থাপন ও রাস্তা মেরামত কার্যক্রম পর্যায়ক্রমিকভাবে ও যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে কার্যকর বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
এছাড়া, ভূমিকম্পের সময় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, এজন্য প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কাবির খান জানিয়েছেন, সড়ক খনন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সতর্কভাবে পরিচালিত হবে।
তিনি ধাপে ধাপে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, "একই সময়ে দুটি সড়কে খনন কাজ হবে না।" প্রতিটি অংশের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা হবে, এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগে থেকেই বিকল্প রুটের ব্যবস্থা করা হবে।এ প্রকল্পে নতুন নিরাপত্তা সুবিধাও যুক্ত করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্পের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা।'
অর্থায়ন ও তার যৌক্তিকতা
প্রায় ৮,০৬৯ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে বরাদ্দ থাকবে ৩ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে তিতাস গ্যাসের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৮২১ কোটি টাকা, এবং বাকি ৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) থেকে ঋণ নেওয়া হবে।
বিদ্যমান গ্যাস নেটওয়ার্কের অবনতির কারণে প্রকল্পটিকে অত্যাবশ্যক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে, প্রকল্প এলাকায় নগরায়নের সম্প্রসারণের কারণে গ্যাসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। ফলে পিক আওয়ারে গ্যাসের চাপ কমে যায়।
এছাড়া অন্যান্য ইউটিলিটি সেবার লাইন স্থাপন বা সংস্কারের সময়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরোনো এই পাইপলাইনের সুরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে গ্যাস লিকেজের মাধ্যমে অপচয় যেমন হচ্ছে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা ২৭৫ এমএমসিএফডি থেকে ১০০৮ এমএমসিএফডি পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হবে। যা এই মূল সমস্যাগুলো কার্যকরভাবে সমাধান করবে। এতে গ্যাসের স্বল্পচাপ পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তিতাস অধিভূক্ত গ্রাহকদের প্রায় ৭৩.৩৩ শতাংশই উপকৃত হবেন।