ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই আগামী নির্বাচনের তফসিল: ইসি সানাউল্লাহ

আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আগামী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, আরপিও সংশোধনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিইসির সভাপতিত্বে আজ দিনব্যাপী সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার পদ্ধতি, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি ও নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন করা নিয়ে আলোচনা হয়। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। আরপিও নিয়ে আলোচনা হলেও তা শেষ হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে এটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা কবে নাগাদ হতে পারে—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এটি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি। শিগগির এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করবে।
তিনি বলেন, 'আপনারা ধরেই নিতে পারেন, এই শিডিউল ঘোষণার কাজটা আমাদের, ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধেই আপনারা পাবেন।' তিনি বলেন, 'ভোট হবে পবিত্র রমজান মাসের আগে। যদি ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান মাস শুরু হয়, তার আগে শপথ গ্রহণ, নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ এসবের জন্য দু-চার দিন সময় দিতে হবে। এসবের আগে ভোট হবে।' ভোটের যে তারিখ হবে তার আনুমানিক ৬০ দিন আগে তফসিল হবে বলে জানান তিনি।
প্রবাসী ভোটারদের কথা উল্লেখ করে ইসি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এবার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তারা ভোট দিতে পারবেন। সময় বাঁচাতে প্রবাসীদের কাছে শুধু প্রতীকের ছবি সংবলিত ব্যালট পাঠানো হবে, যেখানে প্রার্থীর নাম থাকবে না। প্রার্থীরা অনলাইনে তাদের নাম দেখতে পাবেন।
'প্রবাসী ভোটারদের জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই শুরু হবে এবং এর জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। ভোট দিয়ে ব্যালট ফেরত পাঠাতে হবে ঢাকায়। দেশেও সরকারি কর্মচারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন,' যোগ করেন তিনি।
এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রবাসী ভোটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ, কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা হারালে সেখানে সেই আসনে পোস্টাল ব্যালট বন্ধ করে দেবে কমিশন। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের জন্য খরচ হবে প্রতি লাখ ভোটারের জন্য ছয় থেকে সাত কোটি টাকা।
নতুন ভোটারদের কথা উল্লেখ করে সানাউল্লাহ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ১৮ থেকে ২০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি আরপিও সংশোধনের ফলে, যা উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ভোটার হবেন, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভুল ও মিথ্যা তথ্য এবং বিদ্বেষ ছড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে আচরণবিধিতে নির্দিষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি শুধু প্রার্থী ও দলের জন্য প্রযোজ্য হলেও, অন্যান্য পক্ষকেও মোকাবিলা করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন হলে নিজেরা ড্রোন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
ইসি জানান, আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে নির্বাচন কমিশন। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশের ৪৫ হাজার কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করা একটি ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া। এত সংখ্যক ক্যামেরা কেনা বা ভাড়া করা কঠিন। এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে এবং তারা বিকল্প উপায় খুঁজছে। এর মধ্যে বিদ্যমান সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ব্যবহার করা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার মতো প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।