স্বৈরশাসকের যদি কোনো সমিতি করা হয়, হাসিনা হবেন তার সভাপতি: ট্রাইব্যুনালে অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, 'স্বৈরাচারদের যদি কোনো সমিতি হয়, শেখ হাসিনা তার সভাপতি হতে পারেন। আর হিটলার যদি মিথ্যার পিএইচডি করতে চাইতেন, তাহলে তিনিও শেখ হাসিনার কাছেই আসতেন।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
আজ রোববার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আদালতের অনুমতিতে এই শুনানি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সূচনা বক্তব্যে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখা। তিনি ছিলেন সব অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু বা নিউক্লিয়াস। অন্য আসামিরা তার অধীনে থেকে বুঝতেন যে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার ওপরই তাদের নিরাপত্তা ও পুরস্কার নির্ভর করছে।'
তিনি বলেন, 'এই বিচার অতীতের হিসাব চুকানোর চেষ্টা নয়, এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত পদক্ষেপ। কেউ যতই ক্ষমতাধর হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আসামির অনুপস্থিতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা হবে না।'
'আসামির ইচ্ছাকৃত পলায়ন এবং বিদেশি রাষ্ট্রের নিলির্প্ততা ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বাধা হবে না। এই বিচারের প্রতিটি ধাপ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, এই বিচার হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্পৃহার অঙ্গীকার', যোগ করেন তিনি।
সূচনা বক্তব্যের পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'জুলাই-আগস্টে যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। তবে সেটা চাই আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে, সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ন্যায়বিচার জরুরি।'
তিনি বলেন, 'বিগত আমলে গুম-খুনের একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছিল। আজ গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে এমন একটি বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি, যাতে খুনের রাজনীতি বন্ধ হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে গুম-খুন, চাঁদাবাজি, টাকা পাচার হয়েছে। আর এর বিরুদ্ধেই ছিল বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলন।'
'আমাদের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই, আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে এসেছি। আমরা ন্যায় বিচার চাই। দেশের মানুষের স্বপ্নের বিচার চাই। আমরা ন্যায় বিচার চাইব, ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাইব', যোগ করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, 'স্বৈরাচারদের যদি কোনো সমিতি হয়, শেখ হাসিনা তার সভাপতি হতে পারেন। আর হিটলার যদি মিথ্যার পিএইচডি করতে চাইতেন, তাহলে তিনিও শেখ হাসিনার কাছেই আসতেন।'
মামলায় আরও দুই আসামি হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের শর্তে রাজসাক্ষী হিসেবে চৌধুরী মামুনের আবেদন গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। এটি তার প্রথম ট্রাইব্যুনালে হাজিরা। তবে এদিন তার হাতে কোনো হাতকড়া বা মাথায় হেলমেট ছিল না। সকালে তাকে প্রিজনভ্যানে করে স্বাভাবিকভাবে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।
এই মামলায় সাক্ষীর তালিকায় রয়েছেন—আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, গবেষক বদরুদ্দিন উমর, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান, নাহিদ ইসলাম, উমামা ফাতেমা এবং 'জুলাই আন্দোলন'-এ আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনার সর্বশেষ পরিচিত ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। তবে তার অনুপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুযায়ী একতরফাভাবে বিচার চলবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংগঠিত সহিংসতার ঘটনায় গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনাসহ চারটি মামলার বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের গ্রেপ্তারকৃত শীর্ষ ১৭ নেতা এবং ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ছয়টি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।