গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নেতার পদত্যাগ; সংগঠনে কর্তৃত্ববাদ, করপোরেট প্রভাবের অভিযোগ

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক প্রধান সমন্বয়ক নূর নবী সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন।
আজ শনিবার (২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
পদত্যাগপত্রে নূর নবী অভিযোগ করেন, বাগছাসের বর্তমান নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির সঙ্গে আপস করছে।
তিনি বলেন, 'জুলাই বিদ্রোহের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী কোরামনির্ভর নেতৃত্ব এবং জনস্বার্থবিরোধী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপস করার কারণে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
নূর নবীর অভিযোগ, পুলিশি দমন-পীড়ন এবং আইনি হয়রানি সত্ত্বেও, যেসব ছাত্র সংগঠন এবং ব্যক্তি মাঠে সক্রিয় ছিলেন–তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র ভিন্ন মতামত রাখার জন্য।
তার ভাষায়, 'মুষ্টিমেয় কিছু নেতা সংগঠনটিকে একচেটিয়াভাবে দখল করে রেখেছেন। ভিন্নমত দমন করছেন, তৃণমূল কর্মীদের কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করছেন।'
নূর নবী অভিযোগ করেন, বাগছাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে করপোরেট প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের মতো সংস্থার কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে তিনি গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, 'এই ধরনের করপোরেট পৃষ্ঠপোষকতা আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করেছে এবং সংগঠনের আদর্শকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।'
নূর নবীর দাবি, বাগছাসের বর্তমান নেতৃত্ব কার্যত সংগঠনটিকে পূর্বের একটি গোষ্ঠী 'ছাত্রশক্তি'র ছায়া হিসেবে পুনর্গঠিত করেছে। সব সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র নির্বাচিত কোরামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। এটি তিনি অগণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
জুলাই বিদ্রোহের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'এই আন্দোলন কখনও একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল না। এটি ছিল সমস্ত ছাত্র সংগঠন এবং বৃহত্তর ছাত্র সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস। দুঃখজনকভাবে, আজ তা কয়েকজনের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।'
সংবাদ সম্মেলনের শেষভাগে তিনি বলেন, 'আমি এমন একটি সংগঠনের অংশ থাকতে চাই না, যা তার মৌলিক আদর্শ থেকে সরে এসেছে। আমি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের চেতনায় একটি নতুন পথ বেছে নিচ্ছি।'
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এমন কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মকে সমর্থন করার কথা বিবেচনা করছেন, যারা আন্তরিকভাবে জুলাই বিদ্রোহের আদর্শে বিশ্বাসী।
উল্লেখ্য, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) নূর নবীকে অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে ৬ আগস্ট তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ঘটনাটি সে সময় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।