গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ৫: নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি আসকের

গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটি মনে করে, গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া ১৬ জুলাই তারিখে রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
আসকের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সংঘর্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন।
আসকের দুই দিনের (২১ ও ২২ জুলাই) তদন্তে উঠে এসেছে যে সমাবেশ শুরুর আগেই নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সমর্থকরা অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালায়, যার ফলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পুলিশের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও এনসিপি নেতারা সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এনসিপি নেতাদের বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই শহরজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছোড়ে।
আসক নিহত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে: দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), ইমন তালুকদার (১৭), সোহেল মোল্লা (৩২) এবং রমজান মুন্সি, যিনি পরে হাসপাতালে মারা যান। নিহতদের মধ্যে মাত্র একজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, বাকি মরদেহগুলো জোরপূর্বক দাফন করা হয়েছে এবং এবং নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র বেসামরিকদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনায় ৫,৪০০ জনের নাম উল্লেখ করে আটটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ৩৫৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য এবং শিশুও রয়েছে।
বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হলো সহিংসতায় সম্পৃক্ততার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ১৮ জন কিশোরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় কারাগারে ৩৪৮ জন ধারণক্ষমতা থাকলেও তখন সেখানে বন্দী ছিলেন ৭৫০ জনের বেশি, ফলে অনেক বন্দীকে অন্য জেলায় স্থানান্তর করা হয়।
সংঘর্ষেল সময় কারাগার চত্বরেও হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে কারারক্ষীরা গুলি চালায়।
আসক তাদের প্রতিবেদনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইন প্রয়োগে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।