আদালতের কাঠগড়া থেকে দোয়া চাইলেন পলক, মামলায় বাসার ঠিকানা সঠিক করতে বললেন ইনু

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ঢাকার আশুলিয়ার থানাধীন এলাকায় রাসেল গাজী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া একই থানার পৃথক দুই মামলায় মানিকগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিন সকাল ৯টা ৫০ মিনিট কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে ইনু ও পলককে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর আগে সাড়ে ৮টার দিকে মমতাজকেও কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে আসামিদের আদালতের এজলাসে ওঠানো হয়।
আদালতে ওঠানোর সময় ইনু এক পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে বলেন, 'মামলায় আমার বাসার ঠিকানা ভুল লেখা হয়েছে। সঠিক করে লিখবেন। নায়তো চিঠি ঠিকমতো পৌঁছাবে না।'
কিছুক্ষণ পরে কাঠগড়ায় তিন আসামি একে অপরকে দেখে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। তিন আসামি তাদের পরিবার ও শারীরিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ইনু ও মমতাজকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করতে দেখা যায়। পলক একটু দুরে দাঁড়িয়ে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে দোয়া করতে বলেন। মিনিট পাঁচেক পর বিচারক এজলাসে ওঠেন।
প্রথমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আশুলিয়ায় গুলি করে রাসেল গাজী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় পলক ও ইনুকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন। শুনানি শেষে এই আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
এরপর আশুলিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে কাপড় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানকে হত্যা মামলায় মমতাজকে গ্রেপ্তার দেখানো আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মজিবুর রহমান ভূঁইয়া এবং একই থানার ফরহাদ হোসেনকে হত্যাচেষ্টার আরেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন পুলিশের উপপরিদর্শক মদন চন্দ্র সাহা। শুনানি শেষে আদালত এই দুই মামলায় মমতাজকে গ্রেপ্তার দেখানো আবেদন মঞ্জুর করেন।
শুনানি শেষে সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদের এজলাস থেকে সিজেএমের হাজতখানায় নেওয়া হয়। নামানোর সময় হাসিমুখে ছিলেন ইনু ও মমতাজ। তবে পলককে বিষণ্ন দেখা যায়। সাধারণ মানুষ পলককে দেখে কেমন আছেন জিজ্ঞেসা করেন। তখন পলক হাত উঁচু করে দোয়া করতে বলেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজতখানায় থেকে প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয় ইনু ও পলককে। প্রিজন ভ্যানের লোহার রডের ফাঁক দিয়ে দোয়া করতে বলেন ইনু ও পলক। তবে মমতাজকে সিএমএম হাজতখানায় নেওয়া হয়।
ইনু ও পলকের মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার গাজীরচট এলাকায় আন্দোলন করছিলেন মো. রাসেল গাজী (২৭)। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে আহত হন তিনি। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহত রাসেল আশুলিয়ার গাজীরচট মধ্যপাড়া এলাকার বেলায়েত গাজী ও সেলিনা বেগম দম্পত্তির ছেলে।
মমতাজের হত্যা মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট কাপড় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বাসা থেকে দোকানের উদ্দেশ্যে বের হয়। এ সময় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের আসামিদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। ওই সময় ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামানসহ অনেকেই দৌড়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করা অবস্থায় আসামিদের গুলি বর্ষণে গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ জানুয়ারি ভুক্তভোগীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে সাজেদা পারভীন আশুলিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
আর মমতাজের হত্যাচেষ্টা মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট আশুলিয়া থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন ফরহাদ হোসেন। ওইদিন থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করার সময় তিনি গুলিতে আহত হন। এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ আগস্ট পলক ও ২৬ আগস্ট হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে অসংখ্য হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও দুর্নীতি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ড ভোগ করেছেন। আর চলতি বছরের ১৩ মে মমতাজ গ্রেপ্তার করা হয়। মমতাজের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় রয়েছে।