‘আম্মু-আম্মু’ ছাড়া আর কিছুই বলছে না আইসিইউতে থাকা মাইলস্টোনের মাকিন

১৪ বছরের মাকিনের এখন স্কুলে থাকার কথা, সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন তিনি। গাজীপুরের বোর্ড বাজারের বাড়ি থেকে প্রতিদিনের মতো বেরিয়ে পড়ার কথা উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে মাকিনের দেখা মিলল রাজধানীর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউ ওয়ার্ডে। তার পরিবারের সদস্যরা কান্নাভেজা অবস্থায় সেখানে অপেক্ষায়।
আইসিইউ'র সামনে কথা হচ্ছিল মাকিনের মামা সুমনের সঙ্গে। বয়স ৪০। কণ্ঠ বুঁজে আসছিল বারবার, কান্না চেপে কথা বলছিলেন তিনি।
'মাকিনকে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে। কিন্তু ওখানে শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে সোমবার দুপুরেই ওকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়,' বললেন সুমন।
'তখন আমরা দিশেহারা। খোঁজ পাচ্ছিলাম না মাকিনের। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরে যার কাছে প্রাইভেট পড়ত মাকিন, সেই শিক্ষককে ফোন দিই। উনি মাইলস্টোন স্কুলেরই শিক্ষক। উনিই বলেন—আপনারা এখনই বার্ন ইনস্টিটিউটে চলে যান। তখন দুপুর আড়াইটা বাজে।'
সুমনের কণ্ঠ নরম হয়ে আসে, 'বয়স অনুযায়ী অন্যদের চেয়ে লম্বা ছিল মাকিন। ওর শরীরের ৬২ শতাংশ পুড়ে গেছে, শ্বাসনালীও দগ্ধ হয়েছে। শুধু পায়ের জুতো ছিল বলে ওই অংশটুকু অক্ষত আছে।'
তিনি বলেন, 'মাকিন দুই ভাইয়ের একজন। ওদের মা খুব যত্ন করে মানুষ করছেন। কোথাও একা যেতে দিতেন না। গতকাল যখন আইসিইউতে দেখতে পেলাম, তখন শুধু "আম্মু-আম্মু" বলছিল, আর কিছু বলতে পারেনি।'
খেলার ভীষণ শখ ছিল মাকিনের। সুমন বলেন, 'গাজীপুরে তো খেলার জায়গা নেই। কিন্তু নানুবাড়িতে গেলে সারাদিন ক্রিকেট আর ফুটবল খেলত। ক্রিকেট ছিল সবচেয়ে পছন্দের।'
মাকিন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তার স্বপ্ন, খেলার মাঠ আর স্কুলবাড়ি—সবই এখন থমকে গেছে একটি বিভীষিকাময় দুর্ঘটনায়।