আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ‘মরিয়া’ প্রমাণ করল তারা ভারতের লোক: সালাহউদ্দিন

কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেন ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না হয় উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত 'মরিয়া' প্রমাণ করল তারা ভারতের লোক। কারণ তারা ভারতের করদ রাজ্য বানানোর জন্য এখানে অনেক চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা একটি জায়গায় অন্তত সফল হয়েছে যে নিজেরা অন্তত ভারতে আশ্রয় পেয়েছে।
শরিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে 'জুলাই অভ্যুত্থান ও রাজনীতিতে গুজব' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস (বিসিএসএ)।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগকে আমরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে মনে করি। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশকে শাসন করবে, শোষণ করবে কিন্তু বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিশ্বাস করবে না। এটা প্র্যাকটিক্যালি প্রমাণ করে দিয়ে তারা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।'
ভারতে গুম থাকার প্রমঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান না হলে হয়ত ভারতেই মরতে হতো। গুম নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে অপমান করেন। যারা গুজব ছড়ান, তাদের ওপর আমার নসিহত (পরামর্শ) নাই। কারণ তারা মোটিভেট হয়ে এসব করে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে বিএনপির কেউ না যাওয়ার প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, 'দাওয়াত দেয়নি, যাবে কীভাবে। দাওয়াত দিলেও যে যেতাম, বিষয়টি তেমন না।'
সালাহউদ্দিন বলেন, '৫ আগস্টের আগে আমরা সবাই এক ছিলাম। ৫ আগস্টের পর সবাই আলাদা হয়ে গেছি। গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংগ্রামের বেদনার কথা আমরা সবাই ভুলে গেছি। এখন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বিভক্তি হয়ে গেছি।'
তিনি বলেন, 'এখনো নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা হয়নি। শুনতে পাচ্ছি হবে হবে ভাব। এখনো নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টা কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নাই। সেই অবস্থার মধ্যে সবাই পিআর বলে চিল্লাচ্ছে।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের পলিটিক্যাল কালচারে, ভোটারদের লেভেলে এখনো আমরা ইভিএমে টিপ দেওয়া শেখাতে পারি নাই। অথচ আছি পিআর নিয়ে। পিআরের পদ্ধতি ইলেকশনটা হচ্ছে নিজের ভাগবাটোয়ারা। কিন্তু গণতন্ত্রের কী অবস্থা হবে, দেশের স্থিতিশীলতা আসবে কি না, সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, অস্থিতিশীল সরকার হলে দেশের কী অবস্থা হবে সেটা নিয়ে কারো চিন্তা নাই।
এ সময় দলগুলোর ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ ত্যাগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
আলোচনার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার।
তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুজব ও মিসইনফরমেশন একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ের পর আমরা দেখেছি কীভাবে ভুয়া অডিও-ভিডিও ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিক পরিবেশকে কলুষিত করা হয়েছে। কখনো এসব গুজব ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের চরিত্র হনন করা হয়েছে, আবার কখনো গুজবকে ব্যবহার করে সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সব পক্ষকে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে আত্মসমালোচনামূলক পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। কেউ যদি গুজব ছড়ায়, তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আর কেউ যদি গুজবের শিকার হয়, তার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি।
বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের গুজবের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোরশেদ বলেন, ভারতের প্রোপাগান্ডা সাধারণ বিষয় না। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালাচ্ছে।
গুজব রোধে আইনি কাঠামোর প্রয়োজন আছে জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসরাফ কায়সার বলেন, গুজবের শাস্তির আগে, গুজব কী জানতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে বলে গুজব। সরকার যখন আইন করে তখন মনে করতে হবে সরকারের একটা মতলব আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই মতলব জনগণের পক্ষের মতলব না। ওই মতলব সরকারের টিকে থাকার মতলব। হাসিনা এটা দেখিয়েছে। পরবর্তী যারা সরকারে আসবে, তারা যেন হাসিনাকে ছাড়িয়ে না যায়।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব রোধে সুনির্দিষ্ট আইনি অবকাঠামো দরকার। এ ধরনের আইন প্রণয়নের আগে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত কঠোর কোনো আইন প্রণয়ন করলে আইনের অপব্যবহার হতে পারে। অপব্যবহার করে ভিন্ন মত দমন করা যায়, বাক স্বাধীনতা দমন করা যায়। আইনের পাশাপাশি মৌলিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক পরামর্শক কমিটির বিশেষ সহকারী ফারজানা শারমিন পুতুল, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র হেলথ নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট জিয়াউদ্দিন হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালমা বেগম, সহকারী অধ্যাপক তানভীর হাবিব জুয়েল, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ।