মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: ৩ আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল চত্বরে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকর দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রিমান্ড যাওয়া আসামিরা হলেন- মো. নান্নু কাজী, মো. রিজওয়ান উদ্দিন অরফে অভিজিৎ বসু ও তারেক রহমান রবিন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মামলাটি প্রাথমিক তদন্তে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা প্রত্যেকের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে।
সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা পাথরের টুকরা দিয়ে ভিকটিমে মাথায় এবং বুকে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনাসহ মামলা তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোহাগকে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন, সিসি ফুটেজে পর্যালোচনায় ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা শনাক্ত এবং মামলা সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার উদ্দেশ্য জিজ্ঞেসাবাদ করার জন্য তাদের ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন।
বেলা ৩ টা ১০ মিনিটে পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দিয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও পেছনে হাতকড়া পরানো অবস্থায় এজলাসে ওঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরে রিমান্ড বিষয়ে শুনানি শুরু হয়৷
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আসামিরা প্রত্যেকেই ঘটনার সাথে সরাসরিভাবে জড়িত আছে।
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা পাথরের টুকরা দিয়ে ভিকটিমে মাথায় এবং বুকে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেছে।
মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার আরও কারা কারা জড়িত গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ১০ দিনের রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।
এরপর বিচারক কাঠগড়ায় থাকা আসামিদের দিকে তাকিয়ে বলেন, 'এত বড় পাথর দিয়ে মানুষটাকে কিভাবে আঘাত করলেন, একবারও বিবেকে বাঁধলো না। একাবারও কি বুকটা কেঁপে উঠল না। আপনারা একজন ব্যক্তিকে কিভাবে নির্মমভাবে হত্যা করলেন।'

কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় আসামিরা মাথা নিচু করে চুপচাপ ছিলেন। তখন বিচারক তাদের পরিচয় জানতে চান। তিন আসামি তাদের পরিচয়ে বলেন। এরপর বিচারক ঘটনার বিষয়ে আসামি মো. নান্নু কাজীকে জিজ্ঞেসা করেন।
তখন নান্নু কাজী বলেন, 'আমি প্রবাসী, তবে আমার মিটফোর্ডে ব্যবসা রয়েছে। অনেক আগে সোহাগের সঙ্গে আমার ছোটখাটো ঝামেলা হয়েছিল সেই কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।'
এরপর আসামি রিজওয়ান জানান, তিনি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত, তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র দূর থেকে একটি ছোট্ট পাথর নিক্ষেপ করেছি। আমি তাকে কোনো আঘাত করেনি।
আরেক আসামি তারেক রহমান রবিন বলেন, আমি সোহাগকে কোনো আঘাত করেনি। দূর থেকে আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। এর বাহিরে কিছু জানি না।
এদিকে, রাষ্ট্রেপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম ইসলাম নয়ন আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, আসামিরা একেকজন হায়েনা রূপে অমানুষ। তাদের নির্মমতা সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে। মানুষের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাদের সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে নির্মমভাবে খুন হন ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে তাকে কংক্রিটের বড় বোল্ডার দিয়ে মাথা ও শরীরে বারবার আঘাত করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ঘটনার পরদিন নিহত সোহাগের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি অস্ত্র মামলা দায়ের করে। এ নিয়ে হত্যায় জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
নিহত মো. সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন।