আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই দেশজুড়ে চিরুনি অভিযান শুরু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এখন থেকেই চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১১তম সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মব সহিংসতা, মাদক চোরাচালান সহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যেকোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণসহ সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। সরকার জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী যেকোনো কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করবে।'
বিশেষ এই অভিযান কখন শুরু হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, 'এখন থেকেই'।
উপদেষ্টা আরও জানান, মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী খুনসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া সব হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, মিটফোর্ডে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে হত্যা করার ঘটনাকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এফআইআরে নাম উল্লেখ থাকা ১৯ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে সাতজনকে র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার দিন বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ মঈন ও সেনাবাহিনী তারেককে অস্ত্রসহ আটক করে। এরপর শুক্রবার বিকেল, রাত এবং শনিবার রাতেও ডিবির অভিযানে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছয়জনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি জানান, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা টিম ঢাকার বাইরেও অভিযান চালাচ্ছে। তদন্তে যদি নতুন করে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এই ঘটনায় প্রশাসনিক কোনো গাফিলতি ছিল কিনা।
উপদেষ্টা আরও জানান, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খুলনায় সংঘটিত আরেকটি হত্যাকাণ্ডেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'অপরাধী অপরাধীই—সে যেই হোক না কেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও দেয়া হবে না। পুলিশও কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেবে না।'
সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই প্রবণতা রোধে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র—সবার সম্মিলিত ভূমিকা প্রয়োজন। কেউ যেন আইন নিজের হাতে না তুলে নেয়, সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
তিনি বলেন, কোনো অপরাধ বা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী ঘটনা ঘটলে তা সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো জরুরি। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, সরকার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী যেকোনো কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করবে।