চট্টগ্রাম সিটির রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়েও হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে ঘাটতি ৮১ কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় হলেও হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে ৮১ কোটি টাকারও বেশি ঘাটতিতে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা এই ব্যর্থতার জন্য মূলত রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনীহাকেই দায়ী করছেন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩০৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ শতাংশ আদায় সম্ভব হয়েছে, ঘাটতি রয়ে গেছে ৮১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
শুধু বেসরকারি হোল্ডিং থেকে আদায়ের হার ছিল আরও কম।
২ লাখ ১৭ হাজার ১৯৫টি বেসরকারি হোল্ডিং থেকে ১৬০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আদায় হয়েছে মাত্র ১০৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ।
বিপরীতে ১ হাজার ৫৩০টি সরকারি হোল্ডিং থেকে রাজস্ব আদায়ের হার ছিল লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ। ২২৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এর আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছিল। সেবার ৩৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বকেয়া করের একটি বড় উদাহরণ হলো চট্টেশ্বরী রোডের 'এপিক অঙ্গন' অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। এখানকার ৯৯টি ফ্ল্যাটের হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া ছিল ৮৫ লাখ টাকা। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনো প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে।
এপিক অঙ্গনের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নানান কারণে আমাদের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়নি। দীর্ঘদিন পরিশোধ না করায় টাকার পরিমাণ বেশি হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই বকেয়ার বড় অংশ পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা আমরা এই মাসের মধ্যে দিয়ে পরিশোধ করব।'
চসিক এলাকায় বর্তমানে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭২৬টি হোল্ডিং এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪টি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি চসিকের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
চসিকের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চসিক ৯টি খাত থেকে রাজস্ব আদায় করেছে ৪৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা সিটি কর্পোরেশনটির রাজস্ব আদায়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এর মধ্যে পৌরকর বাবদ ৩০৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ও ভূমি হস্তান্তর কর ৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা আদায় করেছে।
এছাড়া বিজ্ঞাপন কর বাবদ ৫৫ লাখ ২২ হাজার টাকা, শপ সাইন ফি বাবদ ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা, প্রমোদ কর বাবদ ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকা, যান্ত্রিক যানবাহন ফি বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অযান্ত্রিক যানবাহন ফি বাবদ ৩ লাখ ৩২ হাজার ১১০ টাকা ও এস্টেট ফি বাবদ ৩৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এছাড়া বিবিধ আদায় হয়েছে ৫৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
এই সাফল্য সত্ত্বেও চসিক কর্মকর্তারা বলছেন, কর প্রদানে সবাই আন্তরিক হলে আদায়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো।
রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৮২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ চসিকের পাওনা ১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এছাড়া চসিকের ৪০টি মার্কেটের ভাড়া বাবদ পাওনা ২০ কোটি টাকা।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল টিবিএসকে বলেন, 'গতবারের তুলনায় এবার আমাদের ট্যাক্স আদায় বেশি হয়েছে। এটি কীভাবে আরো বাড়ানো যায়, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পদ ক্রোক করি না। আমরা যথাসাধ্য মানুষকে বুঝিয়ে কর আদায়ের চেষ্টা করি। যাদের বকেয়া থাকে, আমরা তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। এমনকি প্রয়োজনে মেয়র স্যারের মাধ্যমে ফোনও দিয়ে থাকি।'
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মানুষ পানি, গ্যাস বিল ও অন্যান্য কর যেভাবে দেন, সেভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স দেন না। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পাওনাদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে খুব কমই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এছাড়া নগরের সব জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করতে না পারাটাও কর আদায়ে অন্যতম প্রতিবন্ধক।
গত ২৩ জুন চসিকের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটের ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা নিজস্ব উৎস থেকে আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের। আর বাকিটা অনুদান খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ঠিকাদারদের পাওনা, অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক, সড়কবাতির বকেয়া বিদ্যুৎ বিলসহ বর্তমানে চসিকের মোট দেনা ৪০০ কোটি টাকা।