৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ, একাধিক ক্যাডারে পুনরাবৃত্তি নিয়ে বিতর্ক, পদ শূন্যের আশঙ্কা

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় চার বছর পর ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সোমবার (৩০ জুন) রাতে প্রকাশিত ফলাফলে ১,৬৯০ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে ফল প্রকাশের পর একাধিক প্রার্থী অভিযোগ তুলেছেন, ৪৩তম বিসিএসে যারা ইতোমধ্যে একটি নির্দিষ্ট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের অনেকেই ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশ পেয়েছেন।
ফলে ক্যাডার 'পুনরাবৃত্তি'র এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এতে বিপুলসংখ্যক পদ শুন্য থেকে যেতে পারে, বাড়তে পারে চাকরিপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার সময়।
৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসে একই ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। তাদের ভাষ্য, বিসিএসে একই ক্যাডারে পুনরাবৃত্তি আগে বিচ্ছিন্নভাবে ঘটলেও, এবার 'ঢালাওভাবে' এমন ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টিকে নজিরবিহীন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফিরোজ হাসান ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়ে বর্তমানে সিরাজগঞ্জের একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তিনি ৪৪তম বিসিএসেও আবার একই ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ফিরোজ বলেন, 'আগে দেখা যেত, যারা একবার সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, পরবর্তী বিসিএসে একই ক্যাডারে আর সুপারিশ পেতেন না। দু–একটি ঘটনা হলেও তা বিচ্ছিন্ন বলেই ধরা হতো। কিন্তু এবার ব্যাপক হারে হয়েছে। আমার ধারণা, প্রায় ৩০ শতাংশ প্রার্থী ৪৩তম বিসিএসে যে ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছিলেন, ৪৪তম বিসিএসেও সেই একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশ পেয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, '৪৪তম বিসিএসে যোগ দিলে আমি এক ব্যাচ জুনিয়র হয়ে যাব। এতে করে কোনো বাড়তি সুবিধা পাব না। সে কারণে আমি কখনোই ৪৪তম বিসিএসে যোগ দেব না। ফলে এই পদগুলো শূন্য থাকবে।'
সরকারি কলেজের আরেক প্রভাষক মো. বনিউল ইসলামও একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি ৪৩ ও ৪৪—উভয় বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার একটি সরকারি কলেজে কর্মরত এই শিক্ষক বলেন, 'বৃহত্তর স্বার্থে আবার ফলাফল প্রকাশ করা উচিত। আমাদের মতো যাদের ক্যাডার রিপিট হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রার্থী সুপারিশ করা হোক। না হলে পদগুলো শূন্যই থেকে যাবে।'
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইমরান (ছদ্মনাম) ৪৩তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে একটি জেলায় কর্মরত। তিনি জানান, ৪৪তম বিসিএসেও তিনি একই ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, '৪৪তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডারে অন্তত ২০ জন এমন আছেন, যারা ৪৩তম বিসিএসেও একই ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছিলেন। সব মিলে সংখ্যাটা ৫০-এর কাছাকাছি হতে পারে। মৎস্য ও কৃষি ক্যাডারেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। আর সব ক্যাডার মিলিয়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নাম দেখছি।'
এই প্রার্থীদের দাবি, যেহেতু তারা চাকরিতে থেকেই অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, পিএসসি চাইলে তাদের একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশ না করে অপেক্ষমাণ বা নন-ক্যাডার প্রার্থীদের সুযোগ দিতে পারত। এ দাবিটি ৪১ এবং ৪৩তম বিসিএস থেকেই বারবার উঠেছে। এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনও করেছেন প্রার্থীরা।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
তবে, পিএসসির সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান দ্য বিজনেজ স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'একজন প্রার্থীর পূর্বের পরীক্ষার ফলকে আমরা বিবেচনা করব না। কমিশন একে যৌক্তিক ভাবছে না। ৪৩ কিংবা ৪৪ তম বিসিএস সবই আলাদা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। প্রতিটি পরীক্ষাকেই আলাদা পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে পিএসসি এবং নির্দিষ্ট পরীক্ষায় যেভাবে মেরিট এসেছে সেভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।'