২০২৩ সাল শেষে সরকারি চাকরিতে প্রায় ৪.৭ লাখ পদ শূন্য

২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরে মোট ৪,৬৮,২২০টি পদ শূন্য রয়েছে, যা অনুমোদিত মোট পদের ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।
সোমবার (৩০ জুন) প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের 'স্ট্যাটিস্টিকস অফ পাবলিক সার্ভেন্টস, ২০২৪' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সময়মতো নিয়োগ না হওয়া, মামলা, পদ অনুমোদনের পরও নিয়োগ অনুমোদনের ঘাটতিসহ নানা জটিলতার কারণে এত বিপুল শূন্যপদের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগের বছর প্রকাশিত 'স্ট্যাটিস্টিকস অফ পাবলিক সার্ভেন্টস, ২০২৩' অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৪,৭৩,০০১টি। সেই হিসাবে এক বছরে শূন্যপদ কমেছে ৪,৭৮১টি।
সরকারি দপ্তরগুলোতে সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ ছিল ২০২১ সালে। সে বছর এই সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তা কিছুটা কমেছে।
প্রতিবছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় থেকে মাঠ পর্যায়ের সরকারি অফিসসমূহের অনুমোদিত, বিদ্যমান ও শূন্য জনবলসংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এবারের প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে অনুমোদিত মোট পদ ছিল ১৯,১৯,১১১টি। এর মধ্যে কর্মরত ছিলেন ১৪,৫০,৮৯১ জন। বাকি ৪,৬৮,২২০টি পদ শূন্য ছিল। কর্মরতদের মধ্যে পুরুষ কর্মচারী ছিলেন ১০,৩৯,১০০ জন এবং নারী কর্মচারী ৪,১১,৭৯১ জন; অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর অনুপাত ছিল ২.৫:১।
গত বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালের শেষে অনুমোদিত পদ ছিল ১৯,১৬,৫১৯টি, যার মধ্যে কর্মরত ছিলেন ১৪,৪৩,৫১৮ জন। তখন শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৪,৭৩,০০১টি। সেবারও পুরুষ-নারী অনুপাত ছিল ২.৫:১।
প্রথম থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত গেজেটেড পদে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সময়মতো নিয়োগ না হওয়াই বিপুল শূন্যপদের মূল কারণ। এসব শূন্যপদের বেশিরভাগই ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের মধ্যে, যেখানে সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ ২০তম গ্রেডে—৭৯,১৫১টি। এরপর ১০ম গ্রেডে রয়েছে ৭১,৭৯৭টি শূন্যপদ। এসব পদ বেশিরভাগই বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের।
প্রতিবছর শূন্যপদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী—২০১৮ সালে ৩,৯৩,২৪৭টি; ২০১৯ সালে ৩,৮৭,৩৩৮টি; ২০২০ সালে ৩,৮০,৯৫৫টি; ২০২১ সালে ৩,৫৮,১২৫টি এবং ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৫,০৩,৩৩৩টি পদ শূন্য ছিল।
অন্যদিকে, গ্রেড-১ (সচিব পদমর্যাদা) পদে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি জনবল কর্মরত রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তারা আরও জানান, ২০২৪ সালের শেষে শূন্যপদের সংখ্যা আরও বেড়েছে। কারণ ওই বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হয় এবং এরপর ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে সরকার পদত্যাগ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নানা জটিলতায় অনেক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যায়।
তবে একই সময়ে অবসর, পদোন্নতি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত থাকায় উচ্চপদে কর্মরত জনবল অনুমোদিত সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।