নিরাপত্তাহীন কর্মস্থলে ছয় মাসে ৪২২ শ্রমিকের মৃত্যু: জরিপ

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে অন্তত ৪২২ জন শ্রমিক কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
এই সময়ে মোট ৩৭৩টি কর্মক্ষেত্র-দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম। ওই সময় ৪২০টি ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন মোট ৪৭৫ জন।
২৬টি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এই জরিপে বলা হয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলোতে শ্রমিকরা এখনও প্রতিনিয়ত উচ্চমাত্রার ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।
মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসেবে উঠে এসেছে পরিবহন খাত, যেখানে ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২০৭ জন। এরপর রয়েছে পরিষেবা খাত (৬৫ জন), কৃষি ও নির্মাণ খাত (প্রত্যেকটিতে ৫৯ জন করে) এবং উৎপাদন খাত (৩২ জন)।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, যাতে মারা গেছেন ২৬৭ জন। এছাড়া বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪০ জন, উপর থেকে পড়ে গিয়ে ২৩ জন, আগুন বা বিস্ফোরণে ১২ জন, ভারী বস্তু পড়ে গিয়ে ৯ জন, দেয়াল ধসে ৮ জন, পানিতে ডুবে ৫ জন এবং বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাস নেওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে একজনের। অন্যান্য অপ্রধান কারণে নিহত হয়েছেন আরও একজন।
সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, প্রযুক্তি ও শিল্প খাতে অগ্রগতির পরও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার হার এখনও উদ্বেগজনকভাবে বেশি।
তিনি বলেন, 'শ্রম সংস্কার কমিশন কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু সুপারিশ করেছে এবং তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে যতক্ষণ না বাস্তবিক অর্থে নিরাপত্তা মান বাড়ানো যায় এবং দুর্ঘটনার হার কমানো যায়, ততক্ষণ এসব সংস্কার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবনে তেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।'
সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, 'খাতভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি, নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক।'
তিনি শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থার সংস্কার এবং একটি জাতীয় 'নিরাপত্তা সংস্কৃতি' গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।
সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, 'প্রত্যেক খাতের জন্য আলাদা নিরাপত্তা নির্দেশিকা থাকতে হবে এবং নিয়োগকর্তাদের সেই নির্দেশিকার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্রভিত্তিক নীতি প্রণয়ন করা উচিত। একটি কার্যকর নিরাপত্তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে শ্রমিক, নিয়োগকর্তা এবং সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।'
জরিপে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহসহ নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রথমত নিয়োগকর্তার। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে নজরদারি করা। অপরদিকে, কর্মীদের উচিত নিয়োগকর্তার নির্দেশনা ও নিরাপত্তা প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করা।
সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, 'ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ অসম্ভব।'
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এসআরএস একটি বেসরকারি সংস্থা; যারা কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পরামর্শমূলক সেবা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।