সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ

তিন দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ রোববার (২৯ জুন) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাঁকে হাজির করার পর—মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক সৈয়দ মজেদুর রহমান তাকে কারাগার আটক রাখার আবেদন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সিইসি থাকাকালে কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির 'প্রহসনের নির্বাচন' পরিচালনা করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি ও তার সহযোগী কমিশনার ও সচিবালয়ের কর্মকর্তারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর মিত্রদের পক্ষে কাজ করেছেন।
এছাড়া, নির্বাচনে 'ডামি' স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবহার এবং জাতীয় পার্টিকে সীমিত আসন বরাদ্দের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আড়ম্বর সৃষ্টি করা হয় বলে দাবি করা হয়।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কাজী হাবিবুল আউয়াল ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ করেন। এতে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।
তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরোধিতা করে।
দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় হাবিবুল আউয়ালকে গত বুধবার রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
একই মামলায় গত রোববার আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সোমবার তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর শুক্রবার আবার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে গত রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।
জামিন শুনানিতে কাজী হাবিবুল আউয়ালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শফিউল আলম বলেন, "তার বিরুদ্ধে যেসব ধারা আনা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই জামিনযোগ্য। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রযোজ্য নয়, কারণ কোনো ষড়যন্ত্রের সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। তাছাড়া, কাদের প্রতি অনুগত্য ছিল না—তা স্পষ্ট করা হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "তিনি তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। আজ জামিন দিলে জনগণের মনে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা জন্মাবে।"
অপরদিকে, ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, "সাবেক সিইসি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে সেটি বাস্তবায়ন করেননি। তিনি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন, কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন না, তারপরও নিজের শপথ লঙ্ঘন করেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "নিজেই স্বীকার করেছেন নির্বাচন ছিল প্রহসন। তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগসাজশে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন, অন্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কোনো উদ্যোগ নেননি। এতে তিনি সংবিধান অবমাননা করেছেন ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।"
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, "তার গ্রেপ্তারে জাতি সন্তুষ্ট, এতে ভবিষ্যতের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশা ফিরে এসেছে। জামিন দিলে তিনি আবারও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন।"
উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মহানগর হাকিম জিএম ফারহান ইশতিয়াক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ২৫ জুন রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে দুই দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত ২২ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন সাবেক সিইসি-রকিবউদ্দিন আহমদ, নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ মোট ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে প্রভাবিত ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২৫ জুন মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও আমানত খেয়ানতের অভিযোগ সংযোজন করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পর কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেন। তার সময়ে সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।