বাজেটে ঘোষিত ১,০০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে চায় এসএমই ফাউন্ডেশন

নারী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে সহায়তা দিতে বাজেটে ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল বিতরণের আহ্বান জানিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
সোমবার (২৩ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসএমই ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থ উপদেষ্টা কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়ার জন্য এক হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের মতে, তাদের নিজস্ব ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ তহবিল সবচেয়ে কার্যকরভাবে বিতরণ সম্ভব।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাজেটে যে কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তা ইতোমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী তিন বছরে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিভাগীয় শহরে এসএমই ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরে আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন এবং সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ গঠন।
এসএমই ফাউন্ডেশন আশা করছে, এসব প্রস্তাবিত উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হবে। পাশাপাশি 'এসএমই নীতিমালা ২০২৫' বাস্তবায়নের জন্যও আলাদা বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেছে তারা।
ফাউন্ডেশন জানায়, করোনা মহামারির সময় ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার যে ৩০০ কোটি টাকার তহবিল দিয়েছিল, তা নির্ধারিত সময় ও শর্ত অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সফলভাবে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেই অর্থ দিয়ে গঠিত 'রিভলভিং তহবিল' থেকে তৃতীয় দফার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া বাজেট বক্তৃতায় এসএমই খাতের উন্নয়নে চলমান ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় স্বল্পসুদের ঋণ বিতরণ, দেশব্যাপী ক্লাস্টার ম্যাপ হালনাগাদ ও চাহিদা নিরূপণ, ইনকিউবেশন সেন্টারে সেবা প্রদান এবং এসএমই পণ্য মেলার আয়োজনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের উল্লেখ করায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ফাউন্ডেশনটি।
এসএমই ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিএমএসএমই খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। তারা জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে পাঠানো তাদের ১৪০টি সুপারিশের মধ্যে ৪১টি প্রস্তাব গ্রহণ করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তারা।
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশন নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
২০০৭ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে সহায়তা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, দেশে ৭৮ লাখেরও বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা দেশের মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশেরও বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এসএমই খাত থেকে। বর্তমানে এই খাতে নিয়োজিত আছেন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ।