ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন, ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রস্তুতি কতদূর?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য ছাত্রসংগঠনগুলো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। গত ১৬ জুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সংগঠনগুলোর মধ্যে তৎপরতা আরও বেড়েছে।
ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় প্যানেল কিছুটা চূড়ান্ত করেছে। তবে ছাত্রদল এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। একাধিক ক্ষুদ্র ছাত্রসংগঠন সম্মিলিতভাবে একটি প্যানেল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে কিছু স্বতন্ত্র এক্টিভিস্ট পৃথক 'স্বতন্ত্র' প্যানেল গঠনের পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে ডাকসুর গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রকাশ করেনি। যদিও কিছু আচরণবিধি ও কাঠামোগত সংস্কার হয়েছে, কিন্তু ক্ষমতা কাঠামোর ভারসাম্য নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ রয়ে গেছে।
কমিশনের প্রথম সভা রোববার
আগামীকাল রোববার (২২ জুন) নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম সভা করবে। বৈঠকে তফসিল ঘোষণার আগের কর্পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
ছাত্রদলের সিদ্ধান্ত অনিশ্চিত
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এখনো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো সাংগঠনিক নির্দেশনা আসেনি। দলের অভ্যন্তরেও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার উদ্যোগ হয়নি, ফলে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা ধোঁয়াশায় রয়েছেন। অনেকেই নেতৃত্বের কাছে দ্রুত সিদ্ধান্ত চাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল শাখার ছাত্রদল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমরা ডাকসুর পক্ষে না বিপক্ষে, কোন পর্যায়ের জন্য প্রস্তুতি নেব— এসব কিছুই স্পষ্ট করা হচ্ছে না। এতে হলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট।'
তবে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। উপাচার্য ও প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করাকে তিনি সংস্কারের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
বর্তমান প্রশাসনের অধীনে তফসিল ঘোষিত হলে ছাত্রদলের অবস্থান কী হবে— এমন প্রশ্নে তিনি জানান, নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্যানেল গুছিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ
জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কেন্দ্রীয় প্যানেল ও কর্মপরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের ভিপি এবং কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আবু বাকের মজুমদার জিএস পদে প্রার্থী হবেন।
সংগঠনটি প্যানেলে ছোট ছাত্রসংগঠন, প্ল্যাটফর্ম ও স্বতন্ত্র অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের যুক্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন।
আব্দুল কাদের জানান, 'আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং ছয় থেকে সাতজন নারী শিক্ষার্থীও প্রতিনিধিত্ব পায়।'
বৃহত্তর জোটের পথে বাম ছাত্রসংগঠনগুলো
সাতটি বাম ছাত্রসংগঠনের মোর্চা 'গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট' যৌথভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। একইসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ), ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), ছাত্র ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ অন্যান্য ধারার সংগঠনগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে চায় তারা। শিগগিরই এসব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-কেন্দ্রিক কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হবে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের দুই শীর্ষ নেতা জানান, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগে নির্বাচনে অনাগ্রহ থাকলেও এখন ছাত্র ইউনিয়নের অবস্থান ইতিবাচক।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, 'গঠনতন্ত্রের কিছু অংশ সংস্কার হলেও ক্ষমতা কাঠামোর জায়গায় ভারসাম্য আসেনি, অনেক দাবিই উপেক্ষিত। আমরা দ্রুত নিষ্পত্তি ও তফসিল ঘোষণার দাবি জানাই।'
হলে প্যানেল দিবে না শিবির, কেন্দ্রীয় প্যানেল 'অনেকটা' চূড়ান্ত
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্যানেল অনেকটাই চূড়ান্ত হলেও কৌশলগত কারণে এখনই তা প্রকাশ করছে না সংগঠনটি। তফসিল ঘোষণার পর প্যানেল প্রকাশ করবে তারা। তবে হল সংসদে তারা কোনো প্যানেল দেবে না। কর্মী-সমর্থকরা সেখানে স্বতন্ত্র এক্টিভিস্টদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে, যাদের শিবির সমর্থন দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, 'হলে আমাদের কমিটি নেই বলে এখনই প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে যারা হলে কাজ করছেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।'
স্বতন্ত্র প্যানেলের উদ্যোগ
ছোট পরিসরের ছাত্রসংগঠনগুলো আলাদা প্যানেলের পরিবর্তে সম্মিলিত প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি কিছু স্বতন্ত্র এক্টিভিস্ট মিলে একটি নিরপেক্ষ প্যানেল গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন খালিদ বলেন, 'ডান, বাম, লিবারেল— সব মতের শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি' ট্যাগলাইনে একটি প্যানেল গঠনের চেষ্টা চলছে।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ও ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা বলেন, 'সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ করে দিতে ডাকসুতে একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।'
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা কী
গত ১৭ জুন গঠিত ১০ সদস্যের নির্বাচন কমিশন আগামীকাল রোববার (২২ জুন) প্রথম সভা করবে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন টিবিএসকে জানান, 'তফসিল ঘোষণার আগে কর্পরিকল্পনা কী হবে তা এই বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করা।'
