লন্ডনে মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শেষ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শেষ হয়েছে।
বৈঠকটি স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টা) শেষ হয়। এ সময় তারেক রহমানকে ডরচেস্টার হোটেল ত্যাগ করতে দেখা যায়।
বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে গ্রেটা থুনবার্গের লেখা 'নো ওয়ান ইজ ঠু স্মল টু মেইক আ ডিফারেন্স', মোনা আরশি ও ক্যারেন ম্যাককার্থি উলফ সম্পাদিত 'ন্যাচার ম্যাটার্স' নামের দুটি বই এবং একটি কলম উপহার দেন।
লন্ডনের ডর্চেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় শুক্রবার(১৩ জুন) সকাল ৯টার (বাংলাদেশ সময় ২টা) দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের আগে যুক্তরাজ্য বিএনপির শত শত নেতাকর্মী বিএনপি নেতাকে স্বাগত জানাতে হোটেল প্রাঙ্গণে জড়ো হন।
তারেক রহমান হোটেলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্যরা।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির তার [তারেক রহমান] সাথে ছিলেন ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির এ শীর্ষ নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। দুজনের মধ্যে বৈঠকটি 'ওয়ান টু ওয়ান' হবে বলে জানা গেছে, সেখানে দুই পক্ষের আর কারও অংশ নেওয়ার সম্ভবনা নেই।
এই উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাৎ ইতোমধ্যেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। সবাই এখন লন্ডনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কারণ অনেকেই মনে করছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে এই সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসতে পারে।
বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আশা করছে, আলোচনাটি চলমান রাজনৈতিক সংকট ও নির্বাচন সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলো সমাধানে সহায়ক হবে।
বিএনপি নেতাদের মতে, এ বৈঠকে এপ্রিলের বদলে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে।
প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে এই সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বিএনপি ও তাদের সমমনা প্রায় ৩০টি দল যুক্তি দিয়েছে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এপ্রিল মাস নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় নয়। তারা বলছে, এই সময়ের আগে রয়েছে পাবলিক পরীক্ষা ও রমজান, আর এপ্রিল মাসে বিরূপ আবহাওয়ার কারণেও নির্বাচন আয়োজন কঠিন হতে পারে। সব মিলিয়ে ওই সময়ে নির্বাচন করলে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি হবে না বলে মনে করছে দলগুলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতা বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস উপযুক্ত নয়।'
তিনি বলেন, বিএনপি চায় দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেই অনুষ্ঠিত হোক। আশা করা যায়, বর্তমান সরকার বিএনপির এই যৌক্তিক বিষয়ে বিবেচনা করবে।'
তারেক-ইউনূস বৈঠকে ডিসেম্বর নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আলোচনা হবে—এমনটা ইউএনবিকে জানিয়েছেন বিএনপির অন্য কয়েক শীর্ষ নেতাও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আমরা আশা করি, এই বৈঠক ইতিবাচক রাজনৈতিক অগ্রগতির পথ দেখাবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করবে।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচনই হবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের অবস্থান তুলে ধরবেন। ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।'
তবে যদি রমজান, পরীক্ষাসহ আবহাওয়ার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফেব্রুয়ারি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব আসে, বিএনপি কি সেটি বিবেচনায় নেবে—এ প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, 'দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ ক্ষমতা তারেক রহমানের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো তাদের আগের অনড় অবস্থান থেকে একটু হলেও সরে এসেছে। তারা হয়তো বুঝছে যে, বিরোধ নয়—সমঝোতার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক শুধু সময়োপযোগী নয়, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারও।
তিনি বলেন, 'এই আলোচনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং দুই পক্ষের মধ্যকার দূরত্ব কমানো সম্ভব হতে পারে।'
ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা, নির্বাচন আয়োজন, নিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন—এসব বিষয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, 'আলোচনার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা যদি নির্বাচনের সময়সূচি পুনর্বিবেচনা করেন, সেটি হবে বাস্তবতানির্ভর একটি সিদ্ধান্ত।'
তিনি জানান, বিএনপি সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায় এবং এই বৈঠক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ দেখাতে পারে।