দেশজুড়ে বাড়ছে করোনা, সংক্রমণ মোকাবিলায় হাসপাতাল প্রস্তুত রাখছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এনবি.১.৮.১-এর কারণে আবারও বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। একই ধারায় বাংলাদেশেও সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং বাড়ানো, পরীক্ষার কিট সংগ্রহ, আইসিইউ প্রস্তুত রাখা—এমন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, কোভিড মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে রেড ক্রিসেন্ট থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হয়েছে, আগামীকাল আরও সংগ্রহ করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে অ্যালার্ট [সতর্কবার্তা] জারি করেনি, কোথাও উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। তবে পাশের দেশে রোগী বাড়ছে, আমাদের দেশেও বাড়ছে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছি।'
তিনি জানান, নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য আলাদা কোনো টিকা নেই, তাই পুরোনো ভ্যাকসিনই আবার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কোভিড পরীক্ষার জন্য ল্যাবগুলো আবার চালু হচ্ছে এবং বুধবার থেকে কাউকে পরীক্ষার জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালিত সর্বশেষ কোভিড সার্ভেইল্যান্স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে দেশে সংক্রমণের হার বেড়েছে। মে মাসে ১ হাজার ৪০৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, যা ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়ে এটিই সর্বোচ্চ হার।
আইইডিসিআর-এর ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ও পিএইচওসি পরিচালিত পরীক্ষায় আরও জানা গেছে, এর আগে ২০২৩ সালের মে-আগস্ট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়কালে সংক্রমণের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি ছিল। সর্বশেষ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেশে ওমিক্রন বিএ.২.৮৬ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা পূর্বেও দেশে শনাক্ত হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫ জন। ২০২৫ সালের শুরু থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ২,৩৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে মোট ২১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জুন মাসে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৭ জন। মে মাসে ৫০ জন, এপ্রিল ২৩ জন, মার্চে ২৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৭ জন এবং জানুয়ারিতে ৩০ জন শনাক্ত হয়।
এছাড়া প্রায় দেড় বছর পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিডে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মুশতাক হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ালেও এখনো গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু বাড়েনি। তবে যারা অন্য কোনো রোগে [কো-মরবিডিটি] আক্রান্ত আছে, তারা ঝুঁকিতে আছেন। তাই নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং টিকা নেওয়া জরুরি।'
তিনি আরও বলেন, 'সচেতনতা শুরু করতে হবে হাসপাতাল থেকেই। কর্মীদের মাস্ক পরা এবং রোগীদের হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।'
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৪ জন।