ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন যাত্রায় ৩টি কাজ করতে হবে: ড. ইউনূস

পতিত স্বৈরাচার বাংলাদেশকে যেভাবে ধ্বংসস্তূপ বানিয়েছে সেখান থেকে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হলে ন্যূনতম তিনটি আবশ্যিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৬ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখিত কাজগুলো হলো—প্রথমত, বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দৃশ্যমান করে তোলা। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পুর্নগঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কার সাধনে প্রয়োজনীয় ঐক্যমত ও পথনকশা তৈরি করা। তৃতীয়ত, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তরের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। এ লক্ষ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা।
তিনি বলেন, এই তিনটি ম্যান্ডেট হচ্ছে দেশবাসীর সঙ্গে আমাদের চুক্তি। চব্বিশের শহীদের রক্তেভেজা এই চুক্তি আপনাদের সার্বিক সমর্থন, আস্থা ও সহযোগিতা নিয়ে এবং পতিত শক্তি ও তার দোসরদের সৃষ্ট সকল বাধা-বিপত্তিকে পরাভূত করে আমরা সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন বলেও নিজের দৃঢ় বিশ্বাসের কথা জানান ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞসহ বিগত ১৬ বছরের গুম-খুন নির্যাতনের সত্য উদঘাটন এবং আর্থিক খাতের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রসিকিউশন টিম গঠন ও তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের পাশাপাশি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়েছে। এই মানুষগুলোকে এমনসব বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছিল যাদের কোনো কোনোটির আয়তন ছিল মাত্র তিন ফিট বাই তিন ফিট।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গুমের ঘটনা তদন্ত ও এই ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের জন্য একটি স্বাধীন গুম সংক্রান্ত কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কমিশন এখন পর্যন্ত দুটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা এখনো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিযোগ পাচ্ছে। গুম সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে জমা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছর ধরে এদেশের প্রতিটি স্তরে অপরাধ, অনিয়ম, দুর্নীতির ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। এই রোগাক্রান্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রোগমুক্ত করে জনগণের কল্যাণমুখী করতে হলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।
সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আমি বৈঠক করার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে এসেছে এবং সবসময়ই তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।