এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী কৃষি, সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি খাতকে রপ্তানিমুখী করা এবং সুশাসনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ (৩১ মে) মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে 'অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই এলডিসি উত্তরণ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ের অংশীজন পরামর্শ কর্মশালা'য় তিনি এ কথা বলেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) 'সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্ট' (এসএসজিপি) ও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদির সিদ্দিকী। সভায় সভাপতিত্ব করেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত।
এ সময় উপদেষ্টা বলেন, 'দেশকে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে হলে সুশাসনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।'
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, 'ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে মুন্সিগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।' অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদির সিদ্দিকী বলেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি মুন্সিগঞ্জে একটি বায়োটেকনোলজি ভিলেজ স্থাপনের প্রস্তাবও দেন।
জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত আশা প্রকাশ করেন, এ কর্মশালার আলোচ্য বিষয়গুলো সরকার এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত নীতিমালা ও কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে।
কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএসজিপি প্রকল্প পরিচালক ও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এএইচএম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী খাতে নিয়োজিত স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাঝে এলডিসি উত্তরণ-জনিত সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
কর্মশালায় সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল বাশার এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। সাবেক ট্যারিফ কমিশন সদস্য মোস্তফা আবিদ খান টেকসই উত্তরণের কৌশল এবং স্থানীয় অংশীজনের ভূমিকা উপস্থাপন করেন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এসএসজিপির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেছার আহমেদ, সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুন নাহার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার, ইউনুস খান মেমোরিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদুর রহমান খান এবং মুন্সিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি বাছিরউদ্দিন জুয়েল।
আলোচনায় বক্তারা মুন্সিগঞ্জে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তারা স্থানীয় শিল্প কারখানার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবহন সম্প্রসারণ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং যুবসমাজের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতিমালা কমিটির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় ২০১৮ ও ২০২১ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে। ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণের কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার একটি 'স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি' (এসটিএস) গ্রহণ করেছে।
ইআরডির এসএসজিপি প্রকল্প ইতোমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক কর্মশালা করে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
কর্মশালায় ইআরডি, এসএসজিপি, জেলা প্রশাসন, বেসরকারি খাত ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।