বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে: ডা.তাহের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আরেকটি নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে নোয়াবাজার খাদিজা হোটেল মিলনায়তনে নির্বাচনি দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. তাহের বলেন, "বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। যে জাতি ৪৭-এ স্বাধীনতা এনেছে, ৫২-এর ভাষার অধিকার সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা আবার ৭১ সালে এক হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জীবন, রক্ত, ইজ্জত বিলিয়ে দিয়ে আরেকবার স্বাধীনতা এনেছে। আবার জুলাই-আগস্টে সকলের অংশগ্রহণে এক মহা-গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করেছে। তারা আবার একাত্ম হয়ে জাগ্রত জনতার ব্যানারে সকল ষড়ন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিবে এবং আরেকটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।"
তিনি বলেন, আমাদের ভূমিকা এমন হওয়া উচিত হবে না, যা থেকে এদেশের মানুষ আবার হতাশ হয়ে যায়, আবার শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা হয়। সেই নারী, সেই শিশু, সর্বসাধারণ, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা নিঃস্ব মানুষেরা—আত্মত্যাগ করেই মহান বিজয় অর্জন করেছিল, তাদের সেই ত্যাগ এবং রক্ত যেন বৃথা না হয়। এ জাতি বার বার সংগ্রাম করলেও—কতিপয় নেতৃত্ব এবং লোভী মানুষের কারণে বঞ্চিত হয়েছিল, প্রতারিত হয়েছিল।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আরও বলেন, "অতীতে বার বার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, মাথানত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, মানুষের সংগ্রামে সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আগামী দিনেও কেউ বা কারা যদি মনে করেন—জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতায় গেলেই তারা সফলকাম হবে—আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, স্বাভাবিক ধারায়, গণতান্ত্রিক ধারায়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে – একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্বাভাবিকভাবে যে পরিবর্তন আসবে, নির্বাচন আসবে, সে নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়ে সরকার পরিচালনা করবে – এ মানসিকতার যে রাজনীতি, সে রাজনীতি টিকে থাকবে।"
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে ডা. তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলাম, আপনাকে নির্বাচন দিতে হবে। যদি নির্বাচন ডিসেম্বরে হয় জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই, যদি তার আগে মৌলিক সংস্কার শেষ হয়। যদি মৌলিক সংস্কার হওয়ার জন্য আরও দুই মাস বেশি লাগে, তাহলে ডিসেম্বরের ওপর জেদ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার মানে হয় না। সুতরাং, নির্বাচন ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে হোক জামায়াতের আপত্তি থাকবে না। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ আপনি ঘোষণা করুন। আমরা দুইটি বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছি – একটি নির্বাচনের, আরেকটি সংস্কারের। এটা আপনার মতো করেই আপনি ঘোষণা করুন। তাতেই আমি মনে করি, পরিস্থিতি প্রশমিত হবে। এক মাস বা দুই মাসের পার্থক্য এদেশের জনগণ মেনে নেবে। তবে ডিক্লারেশনটা অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। রোডম্যাপের তারিখ বা মাস ঘোষণা করলে এ আস্থার সংকট কমে যাবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মু. মাহফুজর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইনের পরিচালনায় এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন– জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক উপজেলা আমীর ভিপি সাহাব উদ্দিন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ফজলুর রহমান মজুমদার, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহীম। সমাবেশে উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রহিমসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, কেন্দ্র ও গ্রাম কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।