চীনে রপ্তানির পরিকল্পনায় বাড়তে পারে কাঁচা চামড়ার দাম, আজ মূল্য ঘোষণা

কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে এবার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া আমদানির অনুরোধ জানানো হবে।
গতকাল (২১ মে) 'কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটি'র বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া আমদানির অনুরোধ জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) কোরবানির চামড়ার দাম ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, "এ বছর গতবারের তুলনায় চামড়ার দাম বাড়ানো হবে এবং সেটিই হবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।"
তিনি আরও বলেন, "বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করব। প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া সরাসরি রপ্তানিও করা হবে।"
তিনি জানান, সিন্ডিকেটের প্রভাব ঠেকাতে এবং উপযুক্ত দাম নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা ও এতিমখানায় চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকার বিনামূল্যে ৩০ হাজার টনের বেশি লবণ সরবরাহ করবে।
চামড়া সংরক্ষণের পদ্ধতি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সরকার একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে তা প্রচার করবে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদের পর অন্তত ১৫ দিন স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়ে আধা-সরকারি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংসহ দেশব্যাপী ৭০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করবে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
কাঁচা চামড়ার দাম
গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরু ও মহিষের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৫-৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০-৫৫ টাকা। খাসির চামড়া ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১৬.১৮ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ১.২২ বিলিয়ন ডলারে। তবে গত অর্থবছরে আয় কমে দাঁড়ায় ১.০৪ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৬০ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল সময়কালে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৩২.৫৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.০৮ শতাংশ বেশি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।