ডিসিসিআইয়ে মতবিনিময় সভা: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত পুনরুদ্ধারের আহ্বান ব্যবসায়ী নেতাদের

দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। জনসাধারণের নিরাপত্তা ও বাণিজ্য-বিনিয়োগের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তারা বলেন, চাঁদাবাজি এখন ব্যবসায়ীদের জন্য 'একটি ক্যান্সারে' পরিণত হয়েছে।
আজ (২১ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে উন্নত আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার অত্যাবশ্যকীয়তা' শীর্ষক এক আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন তারা।
গত বছর সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলাসহ সব ক্ষেত্রে উন্নতির আশা করা হলেও বাস্তবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
সভায় জানানো হয়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ আজাজ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (অপরাধ ও অভিযান) অতিরিক্ত কমিশনার এসএন মো. নাজরুল ইসলামের। তবে রাজধানীর 'চলমান পরিস্থিতির' কারণে তারা উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
তাসকিন আহমেদ বলেন, "বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিবেশ চাঁদাবাজি, অনলাইন প্রতারণা, পরিবহণ ঝুঁকি, প্রতারণামূলক কার্যক্রম এবং সাইবার হুমকির মতো সমস্যা দ্বারা জর্জরিত। এতে শুধু ব্যবসা পরিচালনাই বিঘ্নিত হচ্ছে না, বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা নষ্ট হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক ও স্পষ্ট প্রত্যাশা—নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং নির্বিঘ্নভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ নিশ্চিত করা।"
তিনি আরও বলেন, "যখন পোশাক খাতে কোনো ঘটনা ঘটে, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ৫০-১০০ কর্মী নিয়োজিত থাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তেমন সহায়তা পায় না।"
অনুষ্ঠানে সাবেক ডিসিসিআই সহ-সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, "রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর যে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা ছিল, বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে।"
আরেক সাবেক সহ-সভাপতি আবু হুরায়রা বলেন, "যদি আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি হয়, তবে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।"
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা বলেন, "দেশের সকল স্থল বন্দর থেকে ট্রাক ভাড়া করতে হচ্ছে দালালদের মাধ্যমে। প্রতিটি ট্রাকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দালালি খরচ দিতে হয়। এ ছাড়া চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে।"
বাংলাদেশ চিনিকল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর মানুষ রাতে বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছে। ছিনতাইয়ের ভয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন খাতে। এমনকি হাইওয়েতে চিনির ট্রাকও ছিনতাই হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান বাবর বলেন, মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। পুলিশ কোনো সমাধান দিচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান।
সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, চিনি ও ভোজ্যতেল বাজার কিছু সংখ্যক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। তারা সরকারকে আমদানি উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, "রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সিন্ডিকেট ভাঙার যে আশা ছিল, তা বাস্তবে দেখা যায়নি। এখন চিনির বাজার মাত্র তিনটি কোম্পানির হাতে। এই অবস্থায় চিনির আমদানি পুরোপুরি উন্মুক্ত করা উচিত।"