ভারতের নিষেধাজ্ঞা: আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি কমবে ৩০%, দৈনিক ক্ষতি ৪০ লাখ টাকার বেশি

তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাবারসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য অন্তত ৩০ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এতে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
মূলত যে ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে চার ধরনের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত রপ্তানি হয়, যা এই বন্দরের রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে বন্দরে নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। শুরু থেকেই আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি হওয়ায় রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবে পরিচিতি পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত ভারতের সেভেন সিস্টার্সের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কমতে থাকে রপ্তানি বাণিজ্য।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, পিভিসি সামগ্রী, রড ও সিমেন্টসহ কয়েকটি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যায় হিমায়িত মাছ।
তবে গত শনিবার (১৭ মে) বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরে। রোববার (১৮ মে) মাত্র ১০ট্রাক হিমায়িত মাছ ও ভোজ্য তেল রপ্তানি হয় ভারতে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। এদিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া কোনো পণ্যই রপ্তানি হয়নি।
মূলত, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও মিজোরামের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কাঠের ফার্নিচার, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত জুস, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী এবং তুলা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের ফার্নিচার ছাড়া বাকি সবকটি পণ্যই নিয়মিত রপ্তানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে।
আখাউড়া স্থল শুল্কস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারতে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আর চলতি অর্থবছরে গত এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয় ৪৫৩ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকার পণ্য।
রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মেলামাইন সামগ্রী ও শুটকি।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, হিমায়িত মাছের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা। প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের এসব পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। ফলে এ পণ্যগুলো আমদানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ায় রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মূলত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সঙ্গে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই দেশটির সরকার আমদানির সুযোগ সীমিত করেছে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের, যা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি তাদের।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নিসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য অন্তত ৩০ শতাংশ কমবে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হবে।'
'রপ্তানিকৃত পণ্যের তালিকা খুবই সীমিত। ফলে এমনিতেই সংকুচি রপ্তানি বাণিজ্য। এ অবস্থায় যেসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি আয় অনেকাংশে নির্ভর করে, সেগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে রপ্তানি আয় কমে যাবে।'
দ্রুত বিষয়টি ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, 'ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রপ্তানি আয় কমবে, বন্দরের রাজস্বও কমবে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি।'