ভোলা: মেঘনার তীব্র ভাঙনে দিশাহারা বাসিন্দারা, ঝুঁকিতে শহররক্ষা বাঁধ

ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নে মেঘনার তীব্র ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। নদী ভাঙন এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, ইতোমধ্যে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বহু ঘরবাড়ি ও জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শহররক্ষা বাঁধও।
শিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগমের ঘরের পাশ ঘেঁষে চলে এসেছে মেঘনার গহ্বর। তাই ঘরের মালামাল গুছিয়ে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত তিনি। ঘরের বিভিন্ন অংশ খুলে দিচ্ছেন সহযোগীরা। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে, নইলে রাতের কোনো এক সময় ভেসে যেতে পারে বলে শঙ্কা তার।
আনোয়ারা বলেন, 'আগের ভাঙনে ঘরবাড়ি-জমি সব হারিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিছিলাম। মেঘনা আবারও সন্ধান পাইছে। না সরালে জানি না কোন রাত্তিরে গাঙ্গে ভাইস্যা যামু।'
তার সঙ্গে ছিলেন ইয়াসমিন ও রাবেয়া বেগম। তারা জানান, ভাঙনের আতঙ্কে এলাকার মানুষ রাতে ঘুমাতে পারেন না। বিকল্প কোথাও জমি কিনে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই কারো। নদীভাঙনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই লড়ছেন এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিবপুরের স্লুইসগেট, মাছঘাটসহ চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। শহররক্ষা বাঁধ থেকে মাত্র ৫৫ মিটার দূরে পৌঁছে গেছে ভাঙন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, ইতোমধ্যে দেড় কানি জমি নদীতে চলে গেছে। বাকি আছে মাত্র ৫ গন্ডা জমি। তিনি বলেন, 'এই বর্ষায় তাও থাকতে পারে না। সবই যদি নদীতে চলে যায়, তাহলে একেবারে ফকির হইয়া যামু।'
নানান সময়ে মেঘনার ভয়াবহতার সাক্ষী সত্তরোর্ধ্ব সিরাজ বলেন, 'নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন ঘরের পাশে চলে এসেছে। টাকা পয়সা নাই যে অন্য কোথাও জমি কিনে ঘর তুলমু। ঘরটা যদি যায়, ঢাকায় গিয়া কুলি-মুজুরি করুম ভাবতাছি।'
কৃষক মঞ্জুর আলম বলেন, 'ভাঙন আমার চাষাবাদের জমির কাছে চলে আসছে। বিলীন হয়ে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাবো। সরকার যদি বাঁধ দিত, জমিটা বাঁচত।'

ভোলাকে বলা হয় দ্বীপ জেলা। এটি একটি সাগর ও দুটি বড় নদী দ্বারা বেষ্টিত। জেলার পূর্ব ও উত্তর পাশে রয়েছে মেঘনা নদী, আর পশ্চিম পাশে তেঁতুলিয়া নদী। দক্ষিণে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর।
এছাড়াও বেতুয়া, বুড়া গৌরাঙ্গ, জাঙ্গালিয়া, ইলিশা, আগুনমুখা ও মায়া নদীর উৎস ও পতনমুখ এই জেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ফলে সারা বছরই নদীভাঙন ঘটে থাকে। তবে চলতি মৌসুমে সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলো ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, তাদের বসতভিটা বেড়িবাঁধের পাশেই। মেঘনার ভাঙন এভাবে চলতে থাকলে বসতভিটাও টিকবে না। বাঁধ ভেঙে গেলে শহরেও পানি ঢুকে পড়বে বলে শঙ্কা তার।

আল আমিন ও মো. ফারুকের ভাষ্যে, 'জিওব্যাগ ফেলে কিছুদিনের জন্য ভাঙন ঠেকানো গেলেও নদীর স্রোতে তা আবার ধসে যায়। আমরা বারবার এই দুর্যোগ চাই না। সিসি ব্লকের মাধ্যমে ভাঙনরোধ না করলে ভোলার মানচিত্রই বদলে যাবে।'
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন আরিফ বলেন, শিবপুর ইউনিয়নের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় অতিভাঙন দেখা দিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ খাতের আওতায় ৬০ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং চলছে। বাকি এলাকার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভাঙনের স্থায়ী সমাধানে সিসি ব্লক নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। সিসি ব্লক নির্মাণে ভাঙন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।