কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা নদী তীরবর্তী প্রায় ১০ হাজার মানুষ

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে নদী পাড়ের চার গ্রামের বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম দিন পাড় করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ দিন ধরে বাহিরচর ইউনিয়নের ১২মাইল, টিকটিকিপাড়া, মসলেমপুর ও মুন্সিপাড়াসহ আশপাশের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি; ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ পদ্মা নদী রক্ষা পাউবোর বেড়িবাঁধ। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে চার গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, ১২মাইল টিকটিকিপাড়া ও মসলেমপুরের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় এই ভাঙন শুরু হয়েছে।
এছাড়াও, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন রাইটা ফয়জুল্লাপুর মহিষকুন্ডি পদ্মা নদীরক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে। এখানেও গত দুই মাস আগে ভাঙন শুরু হলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নদী ভাঙনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মুন্সিপাড়ার বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছে।
এসময় তারা তাদের পৈতৃক ভিটা রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
এ লক্ষ্যে তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার আহ্বান জানান। কিন্তু মানববন্ধন হওয়ার ৩-৪ দিন পরেও আশানুরূপ কোনো ফলাফল না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধতা ব্যক্ত করেছেন তারা।
বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা গিয়াস মুন্সি বলেন, 'আমাদের জানামতে এই পদ্মা নদীতেই কয়েক হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এই ভাঙনেও একরের পর একর কৃষি জমি বিলীন হয়েছে।
বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, ১২ মাইল টিকটিকিপাড়া ও মসলেমপুরের এই তিন গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় এই ভাঙন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাঙন স্থান থেকে পদ্মা নদী রক্ষা বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য মাত্র ৪০ মিটার।

একই এলাকার বাসিন্দা মেজবার মুন্সী বলেন, পদ্মায় এতদিন বিলীন হয়েছে ফসলি জমি। এবার বিলীনের পথে কয়েক হাজার পরিবারের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটেটুকু। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে এই ভাঙন রোধ করা আর সম্ভব হবে না। তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় উপজেলাব্যাপী বড় কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।
আনোয়ার আলী বলেন, বসতভিটা বাদে অনেকেই সব হারিয়ে ফেলেছে। তাই প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জোর দাবি, বিভিন্ন নিয়ম-নীতির বেড়াজালে না থেকে, দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিন।
বৃদ্ধা জরিনা বেগম বলেন, 'যা জমি ছিল, সব গিলে খেয়েছে এই পদ্মা। সরকারকে বলি, আমাদের বসতবাড়ি টুকু রক্ষা করুন।'
এদিকে জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইবাদত আলী জানান, তার মোট সাত বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এক মাস আগে আরও দেড় বিঘা বিলীন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে গোটা এলাকায় বিলীন হয়ে যাবে। তখন লাখো মানুষকে ঘরছাড়া হতে হবে।
ফয়জুল্লাপুর এলাকার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অনেকদিন থেকেই বলছে এখানে কাজ করবে কিন্তু এখন পর্যন্ত করেনি। তারা এখানে বালির স্তূপ সরাতে বলছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বালু এখনও সরায়নি। তাই কাজও আরম্ভ হয়নি।
তিনি বলেন, একবার যদি ভাঙন শুরু হয়ে যায় তাহলে চোখের পলকে সব শেষ হয়ে যাবে। যদি রায়টা মহিষকুন্ডি বেড়িবাধ ভেঙে যায় তাহলে দৌলতপুর, ভেড়ামারাসহ আশেপাশের জেলাগুলোও প্লাবিত হবে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীও আমাদের কাছে একটি আবেদন দিয়েছে। সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরাবর পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, দ্রুতই তারা ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা আমাদের টিম পরিদর্শন করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছি। তারা বরাদ্দ দিলেই কেবলমাত্র আমরা কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আর জিও ব্যাগ ফেলার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। প্রায় দেড় মাস আগে ফয়জুল্লাহপুর এলাকার ভাঙনের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন বালু সরানো সাপেক্ষে কাজ শুরু হবে।