এনসিপির যুব উইং ‘জাতীয় যুবশক্তি’র আত্মপ্রকাশ, ১৩১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) যুব উইং 'জাতীয় যুবশক্তি'র আত্মপ্রকাশ করেছে। আজ (১৬ মে) রাজধানীর শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউয়ে, যা আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ নামে পরিচিত ছিল, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যুব সংগঠন 'জাতীয় যুবশক্তি' উদ্বোধন করেছে।
বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যে আমরা ক্যাম্পাসে থাকতেই শহীদ আবরার পাঠচক্র শুরু করি। এরপর ছাত্রশক্তি গঠন করে সবদলকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিই। সেই ছাত্রশক্তির ধারাবাহিকতা থেকেই আজকের যুবশক্তি।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন আমরা শ্রমিক, প্রবাসী থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে নিজেদের সংগঠিত করছি।'
তিনি জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক হিসেবে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে ডা. জাহেদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তুহিন মাহমুদ এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নাহিদা বুশরা দায়িত্ব পালন করবেন। সবমিলিয়ে ৬৪ জেলা থেকে ১৩১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, 'যুবশক্তি গতানুগতিক দলগুলোর মতো লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করবে না। এটি রাজনীতি অন্য মাত্রা যোগ করবে। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছলতা ও সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশে সহায়ক হবে।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণ ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য লড়াই করে আসছে। কিন্তু বাকশাল, স্বৈরাচারী শাসন বারবার ফিরে আসে। আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর এখন সময় মতাদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় যুবশক্তি সার্বভৌমত্বের রক্ষা করবে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর যারা গ্রহণ করতে পারছেনা তাদেরকে বলে দিতে চাই, ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশ আর রাজনীতি করতে দিবে না।'
আখতার হোসেন বলেন, 'ফ্যাসিবাদ বিলোপ হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে গেছে। এজন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকতে হবে। এজন্য গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, 'অতিদ্রুত জগন্নাথের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে।'
দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এসব বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। মানবিক করিডোরের দরকার আছে কি না সেটা দলগুলো ঠিক করবে।'

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ জানানো নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, 'ভারতকে এ দেশের গণতন্ত্রকে সম্মান করতে হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের কথা বলার সুযোগ নেই এখানে।'
যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক (যুব) অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলামসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতারাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরের আগেই সমর্থক ও কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। সারাদেশ থেকে সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা আবুল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'আমরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশকে গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই রাজপথে আমাদের উপস্থিতি জরুরি।'
তিনি আরও বলেন, 'এই যুব সংগঠনটি কোনো প্রচলিত রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের মতো কাজ করবে না। এটি দেশের যুব সমাজকে গড়ে তোলার একটি মঞ্চ।'