২০২৩-২৪ অর্থবছরে শাহজালাল বিমানবন্দরের আয় ৩০০০ কোটি টাকা: বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলছেন, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বিমানবন্দরটি আয় করেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
তিনি জানান, গত বছর এই বিমানবন্দর দিয়ে যাতয়াত করেছেন এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী সংখ্যা ও সেবার মান আরও বাড়বে।
আজ বুধবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল। তাকে বিদায় সংবর্ধনা ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগীব সামাদকে স্বাগত জানাতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামকে ২০২২ সালের ২২ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ দেয় সরকার।
কামরুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ। গত ৭ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তার নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, 'শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বছরে ৮০ লাখ যাত্রীসেবার সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও গত বছর এই বিমানবন্দর দিয়ে রেকর্ড ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, 'আমি আমার মেয়াদে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছিলাম। ফলস্বরূপ, ৮৫ শতাংশেরও বেশি লাগেজ এখন স্ট্যান্ডার্ড সময়ের মধ্যে (১ ঘণ্টা) যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, যা স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যাত্রীসেবা বাড়াতে যে হটলাইন চালু করা হয়েছিল, তাতে এখন যাত্রীদের ছোটখাটো অভিযোগ আর প্রশ্নগুলোর ৯০ শতাংশর নিষ্পত্তিই টেলিফোনে করা সম্ভব হচ্ছে।'
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জেট ফুয়েলের দাম কমিয়েছে সরকার। এটা ফ্লাইটের ভাড়া কমাতে সাহায্য করবে এবং অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহনের বাজারকে চাঙ্গা করবে। আর বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপিতে বিমান পরিবহন খাতের অবদান ৫-৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমানে ১ শতাংশেরও কম।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ২০২৪ সালে এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী চলাচল প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, 'এর মূল কারণ হিসেবে অভিবাসী কর্মীদের চলাচল। অভিবাসী কর্মীরা যেন নিজ দেশের বিমানবন্দরে যথাযোগ্য সম্মান ও সেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এখনো সেই চেষ্টা চলছে।'
চলতি বছরের ডিসেম্বরে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী সেবার মান ও যাত্রী সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন কামরুল ইসলাম। বিমান পরিবহন খাত সম্পর্কে গঠনমূলক প্রতিবেদনের জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
শাহজালাল বিমান বন্দরের নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগীব সামাদ বিমানবন্দরে স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে যাত্রীসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, 'বিমানবন্দর দেখেই একটি দেশ সম্পর্কে ধারণা পান বিদেশিরা। তাই শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অপারেশন শুরু করার চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এটিজেএফবি সভাপতি তানজিম আনোয়ার। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লব।