গরমে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম, মাঝারি আকারের ডাব ১৫০ টাকা

প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তির লক্ষ্যে মানুষ ডাব এবং তালের শাঁস কিনছেন। এতে চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে এ দুটি ফলের।
রোববার (১১ মে) রাজধানীর কল্যাণপুর, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঝারি আকারের ডাবের দাম ১৫০ টাকা। ছোট আকারের ডাব ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রায় পাঁচজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিটি ডাবের দাম গত এক সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় মাঝারি আকারের ডাব ১৫০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় মাঝারি আকারের ডাব ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কারওয়ান বাজারে মাঝারি আকারের ডাব ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং ছোট আকারের ডাব ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই বছর ধরে ডাব বিক্রি করছেন মোহাম্মদ ইউনুস। রোববার তিনি ১২০টি ডাব কিনেছেন এবং দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৮০টি ডাব বিক্রি করেছেন।
ইউনুস বলেন, প্রতিটি ডাবের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। 'এক সপ্তাহ আগে যে ছোট ও মাঝারি আকারের মিশ্রিত ১,০০০ ডাব পাইকারি কিনতে পারতাম ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকায়, এখন সেই ডাব কিনতে হয় ৯,০০০ থেকে ৯,৫০০ টাকায়।'
তিনি বলেন, চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ কম। মাঝারি আকারের ডাব ১২০ থেকে ১৩০ টাকা করে বিক্রি করেছি। গত বছরও গরমের সময় এমন দাম ছিল।

কারওয়ান বাজার থেকে পাঁচটি ডাব কিনেছেন আনিসুর রহমান। ছোট আকারের এই ডাবগুলো ১০০ টাকা করে। আনিসুর রহমান বলেন, 'আমার বাসা মগবাজারে। সেখানে এই আকারের ডাব ১২০ টাকা করে। গরমে শরীর সুস্থ রাখতে ডাবের পানির তুলনা নেই, তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়েছি।'
মোহাম্মদ ইউনুসের পাশেই ডাব বিক্রি করছেন মিনু মন্ডল। আজ তিনি ২১০টি ডাব কিনেছেন। বেলা ৩টার সময় মাত্র ২৫টি ডাব বিক্রি বাকি ছিল।
মিনু মন্ডল বলেন, 'গরম না থাকলে এই ডাব বিক্রি করতে রাত ৯টা বেজে যেত। আমি ছোট-বড় মিশ্রিত ডাব পাইকারি কিনেছি ৯০ টাকা করে প্রতি পিস। বিক্রি করছি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা করে।'
কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম বলেন, 'বড় আকারের ডাব তেমন পাওয়া যায় না। পাইকারিতে প্রতিটি বড় আকারের ডাব ১৩০ টাকা করে কিনতে হয়। গরমে চাহিদা বাড়ায় পাইকারিতে প্রতি পিস ডাবের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা।'
চাহিদা-দাম দুটোই বেড়েছে তালের শাঁসের
এদিকে গরম বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে তালের শাঁসের। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে।
কচি তালের শাঁসের বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটি খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।
কল্যাণপুর ও কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, একটি তালের শাঁস ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। একটি তালে সাধারণত তিনটি শাঁস থাকে। তিনটি শাঁসের একটি তাল কিনলে দাম হয় ৩০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে তালের শাঁস বিক্রি করছেন আব্দুল বারেক হাওলাদার। তিনি জানান, গরমের এই কয়দিন প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি করেছেন।

তিনি বলেন, 'একটি তালে সাধারণত তিনটি শাঁস হয়। গোটা একটি তালের শাঁস ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। গরমে চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ পিস তাল বিক্রি হয়।'
তিনি জানান, আর ২০ দিন থাকবে তালের শাঁস বিক্রি, এরপর শাঁস শক্ত হয়ে যাবে।
খাইরুল ইসলাম দুইটি তাল কিনেছেন ৬০ টাকায়। শাঁসগুলো খুলে একটি পলিথিনে দিয়ে দিলেন বিক্রেতা আব্দুল বারেক। কাছে বসে খাচ্ছিলেন খাইরুল।
খেতে খেতে তিনি বলেন, 'এ বছর দাম বেশি মনে হয়েছে। গত বছর একটি মাঝারি আকারের তাল ২০ টাকায় কিনেছি, যেটায় তিনটি শাঁস ছিল।'
ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়েছে ঢাকায়
চলমান তীব্র দাবদাহে ১০ মে ঢাকায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)।
১১ মে রাজধানীতে তাপমাত্রা ছিল ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএমডির সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে অতি তীব্র দাবদাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে এখনো সব ধরনের গরমের ফল ওঠেনি রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে। যদিও কারওয়ান বাজারে গ্রীষ্মকালীন ফল আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম ও আনারস পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ছোট আকারের চারটি আনারস ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গোবিন্দভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে।