‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী বটবৃক্ষ কেটে ফেলা, মালিকের বক্তব্য– বাড়ি করতে বিক্রি করেছেন

মাদারীপুর সদরে 'শিরক' আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলা শতবর্ষী সেই বটগাছটির মালিক দাবি করেছেন, ওই জমিতে নতুন করে বাড়ি নির্মাণের জন্যই গাছটি স্থানীয় এক মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করেন তিনি।
গাছের মালিক সাত্তার হাওলাদার বলেন, বটবৃক্ষ যে জমিতে রয়েছে, সেখানে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য উদ্যোগ নেই। এজন্য অনেকদিন ধরেই বটগাছটিকে বিক্রি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটি কাটতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে— বিধায় কেউ কিনতে আগ্রহী ছিলেন না। পরে আমি নামমাত্র মূল্যে শ্রীনদী বাইতুস সুন্নত ক্যাডেট মাদ্রাসার কাছে গাছটি বিক্রি করে দেই।
বটবৃক্ষ কর্তনের ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
আজ বুধবার (৭ মে) দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গাছের মালিককে সঙ্গে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের বিষয়টি জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব।
মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কবির হোসেন এবং শিরখাড়া ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ইউএনও বলেন, "প্রতিবেদন পাওয়ার পর বটবৃক্ষ কর্তনের বিষয়টি নিয়ে যদি আইনগত কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়, সেই দিকটা দেখব।"
স্থানীয়রা জানান, কুমার নদীর পাড়ে অবস্থিত বটগাছটি 'অলৌকিক ক্ষমতার' অধিকারী বলে বিশ্বাস করে অনেকে। এ কারণে প্রাচীন এই বটগাছের গোড়ায় অনেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করত বলে জানান তাঁরা।
গাছটিকে কেন্দ্র করে শিরক, বিদআত হচ্ছে এমন অভিযোগ করে সেটি কেটে ফেলেন স্থানীয় আলেমরা।
এদিকে শতবর্ষী গাছটি কেটে ফেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বটবৃক্ষ কর্তন বন্ধ করা হয়। যদিও ততক্ষণে গাছটির '৯০ শতাংশই' কেটে ফেলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই বটবৃক্ষটির বয়স শতবর্ষ হবে না। ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হবে।
"গাছটির পুরো অংশ মাটি থেকে কেটে ফেলা এখনো হয়নি। তবে কারো ব্যক্তিগত জমিতে থাকা কোনো বৃক্ষ জমির মালিক বিক্রি বা কর্তন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে আইনগত তেমন বাধা নেই।"
শ্রীনদী বাইতুস সুন্নত ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মাতুব্বর বলেন, "আমরা সাত্তার হাওলাদারের কাছ থেকে বটগাছটি মাদ্রাসায় ব্যবহারের জন্য ক্রয় করি। এবং খরচ কমানোর জন্য নিজেদের লোকজন নিয়ে কর্তন করি। তার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় এখন এটি আলোচনায় এসেছে।"
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা, সদর থানার ওসি আদিল হোসেন এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।