ভোল্টেজ ওঠানামায় ঢাকা ইপিজেডে উৎপাদন ব্যাহত

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর বিদ্যুৎ সরবরাহে ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে শুধু উৎপাদনেই নয়, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক কারখানা কর্তৃপক্ষ মারাত্মক লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করলেও আজ (৬ মে) ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমানে কোনো লোডশেডিং নেই। তবে ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং টেক্সটাইল মিলগুলোতে কাপড় নষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শরিফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা সমাধানে কাজ করছে। তবে কোনো কারখানার অপারেশন বন্ধ হয়নি।'
তবে তিনি আরও জানান, চলমান সমস্যার কারণে অন্তত সাত থেকে আটটি কোম্পানি ইতোমধ্যে ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছে।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল বকেয়া পাওনা নিয়ে কোনো প্রকার পূর্বঘোষণা ছাড়াই ডিইপিজেডের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ইউপিজিডিসিএল) পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে প্ল্যান্টটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে আকস্মিক সংকটের মুখে পড়ে শিল্প ইউনিটগুলো। ওইদিন দুপুরের পর বেশিরভাগ কারখানা কর্মীদের ছুটি দিতে বাধ্য হয়।
পরবর্তীতে ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সন্ধ্যায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে, যা দিয়ে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য প্রাথমিক চাহিদা মেটানো হয়। পরে পল্লী বিদ্যুৎ সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নেয়।
ডিইপিজেডে দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ৪৫ মেগাওয়াট। তবে এটির পরিমাণ সময়ভেদে পরিবর্তিত হয়।
শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, 'আরইবি'র সমস্যা হচ্ছে কানেকশন স্টেবল না, ভোল্টেজ ওঠানামা করে। এতে মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উৎপাদন ব্যাহত হয়।'
তিনি জানান, ডিইপিজেডে তাদের চারটি ইউনিট রয়েছে। তবে তারা ক্যাপটিভ পাওয়ার ব্যবহারের কারণে তুলনামূলক কম সমস্যার মুখে পড়ছে।
বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিক্স পিএলসি-এর ডেপুটি ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'ভোল্টেজ ওঠানামার পাশাপাশি প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে। এতে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা দুটোই ব্যাহত হচ্ছে।'
একটি ডাইং কারখানার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ম্যানেজার জানান, 'আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছি। বিদ্যুৎ ঠিকমতো পাচ্ছি না, ভোল্টেজ দিয়ে কী করবো? আরইবি বিদ্যুৎ দিলেও স্টিম দিতে পারবে না, যেটা আমরা ইউনাইটেড থেকে পেতাম। এখন কোনো রকমে বয়লার দিয়ে অর্ডার মেটাচ্ছি। এভাবে চললে একমাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবো।'
তিনি আরও জানান, যেখানে আগে প্রতিদিন ৫-৬ টন উৎপাদন হতো, এখন তা ১ টনে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তারুজ্জামান লস্কর দাবি করেছেন, 'ডিইপিজেডে কোনো লোডশেডিং বা ভোল্টেজ সমস্যা নেই। আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি।'
তিনি জানান, 'সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কিছুটা ভোল্টেজ সমস্যা ছিল, তবে ৯টার পর তা নেই। আজ ডিইপিজেডে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৪১ মেগাওয়াট। এছাড়া আমাদের আওতাধীন এলাকায় দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ৪৩৯ মেগাওয়াট, যার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৩৯৪ মেগাওয়াট।'
এদিকে ইউনাইটেড পাওয়ারের প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপক মমতাজ হাসান জানিয়েছেন, গ্যাস সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। 'আমাদের কাছে এখনো কোনো আপডেট নেই, গ্যাস প্রেসার জিরো,' বলেন তিনি।
তিতাস গ্যাসের আশুলিয়া জোনের বিক্রয় ব্যবস্থাপক আবু সালেহ মোহাম্মদ খাদেমুদ্দিন বলেন, 'বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরাসরি দেখছে, আমাদের কাছে আপডেট তথ্য নেই।'