অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে চায় ইতালি

ইতালিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে চাইছে সে দেশের সরকার। ঢাকা সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোজি সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান।
তবে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে তাদের বৈধতা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। তারা সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমুল গণিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "ইতালি সম্প্রতি নতুন অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করেছে, যার আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের কীভাবে সহজে ফেরত পাঠানো যায়, তা নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সহায়তা কামনা করেছেন এবং অবৈধ পথে বাংলাদেশিদের ইতালিতে যাত্রা ঠেকাতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা চেয়েছেন।
"পাশাপাশি যারা বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে বলেছেন," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে একটি 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর' (এসওপি) রয়েছে। এই কাঠামোর আওতায়ই ইতালি বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে চায়।
বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে সমুদ্রপথে মোট ৬৬,৬১৭ জন অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ১৪,২৮৪ জন বাংলাদেশি, যা মোট সংখ্যার ২১ শতাংশ। এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশের বেশি (১৪,১১৭ জন) লিবিয়া থেকে যাত্রা করেছে।
ইতালির কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব ব্যক্তি জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত, তাদের একটি অংশ মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুটে সক্রিয় মানবপাচার ও চোরাচালান চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ আশা করে ইতালি বাংলাদেশিদের বৈধতা দেওয়ার ব্যাপারে উদারতা দেখাবে। তিনি জানান, একটি পারস্পরিক সম্মত কাঠামোর আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। সেইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সরকার যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও উপস্থাপন করেন তিনি।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা অনুরোধ করেছি—যদি কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে থাকে, তাদেরও যেন বৈধতা দেওয়া হয়।"
তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশি অন্য দেশের ভিসা নিয়ে পরে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং প্রপার চ্যানেলে ভ্রমণের আহ্বান জানিয়েছে ইতালির প্রতিনিধি দল।
উপদেষ্টা আরও বলেন, "ইতালির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কর্মী নিতে আগ্রহী। কারণ বাংলাদেশিরা পরিশ্রমী, দক্ষ এবং ইতালির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।"
মানবপাচার রোধ, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ এবং সাইবার অপরাধ কমাতে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ডের সঙ্গে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারের কথাও বলা হয়েছে।