কাগজপত্র না থাকা বাংলাদেশিদের 'পুশব্যাক' করছে ভারত

গত এক মাসে ভারতজুড়ে কাগজপত্র না থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীদের আটক করে পূর্ব সীমান্ত দিয়ে দেশে 'পুশব্যাক' করেছে (ফেরত পাঠাচ্ছে) ভারত। দ্য হিন্দু পত্রিকাকে এমনটাই জানিয়েছেন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা।
এরই মধ্যে একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গুজরাটে কাগজপত্র না থাকা ৩০০ বাংলাদেশিকে আটক করে ৪ মে দুটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে ত্রিপুরার আগরতলায় আনা হয়। পরে তাদের স্থলসীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ২০০ জন ছিল নারী ও শিশু।
এর আগে, ২৬ এপ্রিল গুজরাট পুলিশ আহমেদাবাদ ও সুরাট থেকে এক হাজারের বেশি সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে আটক করে।
ভারতের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত মোট ২৯৫ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের ডেইলি স্টার পত্রিকার বরাতে জানা গেছে, ৮ মে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে 'মানবিক উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, 'ভারত যেন আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নাগরিকদের ফেরত পাঠায়।'
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
বুধবার (১৪ মে) রাজস্থানের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জোগারাম প্যাটেল জানান, রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অবস্থানরত প্রায় এক হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'প্রথম দফায় ১৪৮ বাংলাদেশিকে যোধপুরে এনে সেখান থেকে বিমানযোগে কলকাতা পাঠানো হয়েছে। পরে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।'
সূত্র জানায়, যোধপুরে আনা অধিকাংশ আটক ব্যক্তি সিকার জেলার বাসিন্দা। যোধপুরের ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট অফিসারদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে অস্থায়ীভাবে আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্ত্রী জানান, পরবর্তী দিনগুলোতেও বিদেশিদের এভাবে ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে, ১০ মে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গুয়াহাটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকার 'লিগ্যাল প্রসেস' (আইনি প্রক্রিয়া) বাদ দিয়ে সরাসরি 'পুশব্যাক' কৌশল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, 'অনুপ্রবেশ একটা বড় সমস্যা। আগে সিদ্ধান্ত ছিল কাউকে আটক করে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হবে—তাদের জেলে পাঠিয়ে আদালতে হাজির করা হবে। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের দেশে ঢুকতেই দেওয়া হবে না, সরাসরি পুশব্যাক করা হবে। এটা নতুন কৌশল। প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার মানুষ ভারতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু পুশব্যাক পদ্ধতির কারণে এই সংখ্যা কমে আসবে।'
বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের বিষয়ে এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, 'এরা তো তাদেরই নাগরিক, তাই তাদের গ্রহণ করাই উচিত।'
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশটির রাজ্যগুলোতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর এই অভিযান আরও জোরদার করা হয়।
দ্য হিন্দু গত ৩১ মার্চ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত সরকারের অভিযানের ফলে অনেক বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৪১১ জন অননুমোদিত বাংলাদেশি নাগরিক পূর্ব সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৩৩৭। তবে আগস্ট ২০২৪ থেকে চলতি বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০৬-এ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬.৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩,২৩২.২১ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে।