নারীর স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ তহবিল গঠন ও বাজেটে অন্তত ৫% বরাদ্দের সুপারিশ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের

নারীর স্বাস্থ্যকে জাতীয় স্বাস্থ্য অর্থায়নের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ—অন্তত ৫ শতাংশ—নারীর স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ এবং একটি বিশেষ 'নারী স্বাস্থ্য তহবিল' গঠনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
আজ সোমবার (৫ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরেন কমিশনের সদস্যরা।
সুপারিশে বলা হয়, নারীর স্বাস্থ্য কেবল একটি খাতভিত্তিক বিষয় নয়—এটি একটি মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। কৈশোর, গর্ভাবস্থা, প্রসবপরবর্তী ও বার্ধক্যকালীন প্রতিটি ধাপে উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত না হলে স্বাস্থ্য খাতে অসমতা বাড়ে এবং দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
কমিশন জানায়, নারীর স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করলে শিশু মৃত্যুর হার কমে, পরিবারের কর্মক্ষমতা ও আয় বাড়ে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গবেষণা অনুযায়ী, নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করলে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮-৯ ডলার পর্যন্ত অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যায়।
বিশ্বের অনেক দেশেই নারীর স্বাস্থ্যসেবায় পৃথক তহবিল গঠন করা হয়েছে। যেমন, থাইল্যান্ডের 'ইউনিভার্সেল কভারেজ স্কিম' নারীর মাতৃত্বকালীন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট বরাদ্দ করে। কোলম্বিয়া ও রুয়ান্ডায় নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য যৌথ অর্থায়নের বিশেষ কাঠামো গঠিত হয়েছে।
কমিশন বলেছে, বাংলাদেশেও নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি বিশেষ 'নারী স্বাস্থ্য তহবিল' গঠন করতে হবে, যা মাতৃত্বকালীন সেবা, কিশোরী স্বাস্থ্য, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, গাইনোকলজিক ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং বার্ধক্যকালীন স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করা হবে।
এই তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং বাজেট পরিকল্পনায় নারীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ ও গবেষণা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কমিশনের মতে, নারীর স্বাস্থ্যকে যদি জাতীয় অর্থায়নের মূলস্রোতে আনা যায়, তাহলে শুধু স্বাস্থ্যগত বৈষম্যই কমবে না, বরং আরও কার্যকর, সাশ্রয়ী ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এটি একযোগে নারীর মর্যাদা, অধিকার এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেবে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের নভেম্বরে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশনের প্রধান হিসেবে রয়েছেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও হেলথ ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মুহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়েরা আখতার, শিশু নিউরো বিজ্ঞান বিভাগের নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নাইলা জামান খান, সাবেক সচিব এম এম রেজা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক, আইসিডিডিআরবি'র ডা. আজহারুল ইসলাম, স্কয়ার হাসপাতালের স্কয়ার ক্যানসার সেন্টারের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, আইসিডিডিআরবি'র বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ আহসানুর রহমান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ওমায়ের আফিফ।