অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার কাজ করছে: ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক ব্যবস্থার চারপাশে বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য তুলতে আমরা কাজ করছি।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'লক্ষ্যটা স্পষ্ট— এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গর্বের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।'
তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সংস্কার এজেন্ডার পাশাপাশি আমরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার কাজও চালিয়ে যাচ্ছি।'
ন্যায়বিচার কেবল শাস্তির বিষয় নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'ন্যায়বিচার মানে—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন আর কখনো জনগণকে দমন, নিশ্চুপ বা ধ্বংস করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না হয়।'
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'গত বছরের ঘটনাগুলো স্মরণ করতে গিয়ে আমরা তাদের কথা মনে করি—যারা এই স্বপ্নের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের পথ তৈরি করেছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন—যা আশাবাদ, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত।'
প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইআর) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি নিয়ে একটি স্বাধীন তথ্য-অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে।
এই মিশনের প্রতিবেদন গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বিস্তৃত তথ্য ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই—আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে পাশে থাকার জন্য। আমি ভবিষ্যতেও এই অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে আশাবাদী।'
তিনি বলেন, 'এটি ছিল এমন একটি মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আমাদের দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তাদের সাহস কেবল আমাদের জনগণের হয়ে নয়, গোটা মানবতার পক্ষেই উচ্চারিত হয়েছে।'
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—বিশেষত জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের কথা স্বীকার করেন, যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের কঠিন সময়েও বাংলাদেশের পাশে ছিল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা আমাদের পৃথিবীর নৈতিক দিশারি হয়ে ওঠে এবং এর মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্ভুক্ত।'
গত ১৬ বছরে এই অধিকার বারবার অস্বীকার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
'আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে যায়। স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। শাসনব্যবস্থায় সহিংসতা হয়ে ওঠে প্রধান অস্ত্র। গত জুলাইয়ে আমাদের সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে', বলেন ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টতা, সংকল্প ও অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে।'
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে হতাহতদের স্বজন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।