চাঁদাবাজি ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগে কলাবাগান থানার ওসি ও এসআই প্রত্যাহার

সন্ত্রাসীদের নিয়ে গভীর রাতে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগে রাজধানীর কলাবাগান থানার ওসিসহ এক এসআইকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান ও এসআই বেলাল হোসেন।
সোমবার (৫ মে) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাবিদ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড.আব্দুল ওয়াদুদের কলাবাগানের বাড়িতে গত ২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান থানার এসআই বেলালের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সিভিল পোশাকে থাকা কয়েকজন জোরপূর্বক দরজা ভেঙে প্রবেশ করেন। তারা সেসময় এক কোটি টাকা দাবি করেন। অন্যথায় মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। নগদ দুই লাখ টাকা ও বাকি টাকা পরবর্তীতে দেওয়ার শর্ত সাপেক্ষে পুলিশ সদস্যরা সেদিন বাসা ত্যাগ করে।
এই ঘটনায় গত ৪ মে (রোববার) ড.আব্দুল ওয়াদুদ ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি জানান, গত ২৯ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১.৩০ মিনিটের সময় কলাবাগান থানার সাব-ইন্সপেক্টর বেলালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ও ১৫/ ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী তার বাড়িতে জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। এসময় তার ম্যানেজার ৯৯৯ এ টেলিফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল টিমের ২টি গাড়ি এলেও কলাবাগান থানার ওসি মোক্তার হোসেন নিউমার্কেট ও শাহবাগের টহল টিমকে চলে যেতে বলেন।
তার বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরায় এ সংক্রান্ত ফুটেজ রয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন ওয়াদুদ।
অভিযোগপত্রে তিনি দাবি করে বলেন, "একটি দরজা ভাঙার পর দ্বিতীয় দরজা যখন ভাঙার চেষ্টা চলছিল তখন আমি কলাবাগান থানার ওসিকে সাহায্যের জন্য মোবাইলের যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বাড়ি থেকে পুলিশের সাথে বের হয়ে আসতে বলেন। কোনো উপায় না দেখে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি পুলিশের সাথে থানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হই এবং দরজা খুলে দেই।"
তিনি আরও বলেন, "দরজা খোলার সাথে সাথে এসআই বেলাল ও মান্নান আমাকে ধাক্কা মেরে আবার ঘরের ভিতরে টেনে নেয় এবং উগ্রভাবে আমার কাছে কী কী অস্ত্র আছে তা জানতে চান। কিছুক্ষণ পর মান্নান নামের একজন পুলিশ সদস্য তাকে একটু আড়ালে নিয়ে তাৎক্ষণিক ১ কোটি টাকা দাবি করে। অন্যথায় থানা নিয়ে যাওয়া হবে এবং ১০টা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।"
ওয়াদুদ জানান, অনেক দেন দরবার করার পর দুই লাখ টাকা বেলাল ও মান্নানের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং ব্যাংকিং আওয়ারে বাকি টাকা দেওয়ার শর্তে তারা চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার সময় বাড়িতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এরকম একটা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জোরপূর্বক তার কাছ থেকে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
ওয়াদুদ আরও অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা ধরে বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব তদারকি করেন কলাবাগান থানার ওসি মোক্তার হোসেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারি লাইসেন্স নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে তিনি মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করেন। যেখানে হরিণ, ম্যাকাও, কাকাতুয়া, ইলেকট্রিস,রেইনবো লরিসহ বিদেশি দুর্লভ পাখি রয়েছে। গভীর রাতে দরজা ভাঙার বিকট শব্দে হরিণ ভয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে একটি গর্ভবতী হরিণ মুখে আঘাত পায় এবং অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে হরিণটি পরদিন মারা যায়। এছাড়া বেশকয়েকটি পাখিও লুট হয়।
এছাড়া নিয়ে যাওয়া জিনিসের মধ্যে গত ১ মে থানা থেকে ল্যাপটপ পাঠিয়ে দিলেও বাদবাকি মালামাল এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি এবং টাকা না পেয়ে চাঁদাবাজদের হুমকি ধামকি চলমান আছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন ওয়াদুদ।
এ বিষয়ে সোমবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ড.আব্দুল ওয়াদুদ টিবিএসকে বলেন, "ঘটনার পর থেকে এখনো বাসায় যাইনি। যদিও পুলিশ আমাকে বাসায় যেতে বলছে, তবে সন্ত্রাসীদের ভয়ে যাচ্ছি না।"
তিনি আরও বলেন, "শুনেছি ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটা আমি মানি না, ওকে বরখাস্ত করতে হবে। সে একজন সন্ত্রাসী, এলাকায় লোকাল সন্ত্রাসীদের দিয়ে সে চাঁদাবাজি করেন। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।"