তুলাকে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে

দেশে উৎপাদিত তুলাকে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার। আগামী মঙ্গলবার (৬ মে) অনুষ্ঠিতব্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে, দেশে উৎপাদিত আঁশ তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফখরে আলম ইবনে তাবিব টিবিএসকে বলেন, দেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর সিংহভাগই আমদানি করে মেটানো হয়। এতে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, তেমনি বাংলাদেশের শ্রম ঘন ও বিপুল বিনিয়োগের শিল্প খাতও বিদেশ-নির্ভর হয়ে থাকে। অনেক সময় ভু-রাজনৈতিক কারণে শিল্পকে সমস্যায় পড়তে হয়।
তিনি বলেন, 'এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দেশে তুলা উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে দেশে ২ লাখ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদন করা। এতে দেশের চাহিদার ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে। এজন্য সরকার খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত না করে চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলকা, পার্বত্য এলাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকার ফল বাগানকে তুলা চাষের আওতায় আনতে চায়।'
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'তুলা চাষের আওতা বাড়াতে গেলে চাষীদের সুবিধা দিতে হবে। এজন্যই তুলাকে কৃষি পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকার আমদানি বিকল্প ফসল চাষ বাড়াতে— ব্যাংক ঋণের সুদে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চাষীরা আমদানি বিকল্প ফসল চাষে মাত্র ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ পান। তুলা কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে এই সুবিধা পাবে। এতে সাধারণ চাষীরা যেমন এগিয়ে আসবে— তেমনি কনট্র্যাক্স ফার্মিং-ও হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই স্বীকৃতি দিলে দেশের কৃষক, টেক্সটাইল শিল্প এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে বহুমুখী ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ৪৫,২৩০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে ২,০৫,৪২১ বেল (প্রতি বেল ৪৮০ পাউন্ড) তুলা উৎপাদন হয়েছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮৫ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে, যার ৯৮ শতাংশই আমদানি করতে হয়। স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা পেলে— আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
গত ১৭ মার্চ রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে 'বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশে তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.তৌহিদ হোসেন বলেন, দুই মাসের মধ্যে তুলাকে কৃষি পণ্য ঘোষণা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। তামাকের জমির কিছু অংশে তুলা চাষ করলে কৃষকও লাভবান হবেন, দেশও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে। দেশের জন্য যা ভালো, তা কোনো গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলেও— সেই সিদ্ধান্ত নিতে পিছু পা হবে না ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।