জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কারের তালিকায় এলো নিহত ছাত্রলীগ নেতার নাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ১২ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সেই তালিকায় রয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিহত নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লার নাম। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুরো ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে সমালোচনা ও বিতর্ক।
গতবছরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৪, ১৫ ও ১৭ জুলাই ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং পুলিশ হামলা চালায়। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৪, ১৫ ও ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় গত ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
কিন্তু চিঠির তালিকায় দেখা যায়, বহিষ্কৃতদের মধ্যে আছেন শামীম মোল্লা, যিনি ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে একদল শিক্ষার্থীদের পিটুনির শিকার হন। এরপর ওই দিনই আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের দুই ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিলেন। মৃত্যুর দীর্ঘ সাত মাস পরও কীভাবে তার নাম বহিষ্কারের তালিকায় এলো- তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
এবিষয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমরান জাহান বলেন, "কেউ মারা গেলে তো আসামির খাতায় থাকার কথা নয়। এখানে নিশ্চয়ই ভুল হয়েছে। হয়তো আগের কোনো তালিকা অনুযায়ী, এই বহিষ্কারের নাম পাঠানো হয়েছে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, "নাম প্রকাশ ও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় নিলেও- এই ধরনের ভুল প্রমাণ করে প্রশাসনের চরম উদাসীনতা। শামীম মোল্লার মৃত্যু পুরো ক্যাম্পাসেই আলোচিত ঘটনা ছিল। এমন ভুল কাম্য নয়।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান স্বীকার করেন, "সিন্ডিকেট থেকে পাওয়া তালিকা শিক্ষা শাখা প্রস্তুত করেছিল। ৩৭টি বিভাগে আলাদা আলাদা চিঠি স্বাক্ষর করার সময় অসাবধানতাবশত এমন ভুল হয়েছে। দ্রুত সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে।"
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে একাধিকবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পুলিশ। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
৫ আগস্টের পর নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ২৫৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। যাদের ছাত্রত্ব শেষ, তাদের সনদ ও ফলাফল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।