বেড়েছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, কমেছে মুরগির

গত এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ডিমের দাম প্রতি ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। সবজির দামও বাড়তি। বেশিরভাগ সবজিই ৬০ টাকা কেজির ওপরে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর বাজার ও ইস্কাটন এলাকার বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয় কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা সামসুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যখন দাম কম ছিল, তখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হতো। সেই পেঁয়াজ সহজে পঁচে যাওয়ায় সংগ্রহ করে বেশিদিন রাখতে পারতেন না কৃষক। তাই দ্রুত বিক্রি করে দিয়েছেন। আর এখন যে পেঁয়াজ আছে সেটা সংরক্ষণ করে পাঁচ মাসের বেশি রাখতে পারবেন তারা। সেই সঙ্গে অনেক আড়তদার পেঁয়াজ কিনে সংরক্ষণ করে রাখছেন। তাই দাম বাড়তি।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ৫২-৫৪ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীও একই কথা বলেন। তারা আরও জানান, ফসলি জমিতে এখন আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব তুলে ফেলা হয়েছে। কৃষকরা পেঁয়াজ তুলে মজুত করে রেখেছেন। তারা আরও দাম বাড়লে বিক্রি করবেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ে এই সময় পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজিতে ৬০-৬৫ টাকা।
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী
এক মাস আগেও অনেক সবজি কেজিতে ৪০ টাকার কমে বিক্রি হয়েছে। এখন বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ টাকা কেজির ওপরে।
ঢাকার সাভার থেকে চার কৃষক রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় প্রতি শুক্রবার সবজি বিক্রি করতে আসেন। কথা হলে তারা জানান, প্রথমত শীত শেষ হওয়ায় শীতের সবজি বাজারে নেই। আর বৃষ্টি কম হওয়ায় সবজি উৎপাদন কম হয়েছে।
সাভার হেমায়েতপুর থেকে আসা কৃষক মোহম্মদ সাজাহান বলেন, রোদ ও গরমে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। সেচযন্ত্র দিয়ে তেমন পানি পাওয়া যাচ্ছে না। সবজি ক্ষেতে ঠিক মতো পানি না পেলে ফলন কম হয়।
ইস্কাটন এলাকায় প্রতি কেজি পটোল, চিচিঙ্গা, বেগুন, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন সাজাহান।
এদিকে কারওয়ান বাজার ঘুরে খুচরা দোকানে প্রতি কেজি পটোল, চিচিঙ্গা, বেগুন, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মোহম্মদ ইউনুস কারওয়ান বাজার থেকে ধুন্দুল ও চিচিঙ্গা কিনেছেন ৬০ টাকা কেজি করে। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে একটু কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় দোকানে এখানের চেয়ে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি থাকে।
বেড়েছে ডিমের দাম, কমেছে মুরগির
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ও ডিমের দাম বাড়লেও ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা কেজিতে ও সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গত ৩ এপ্রিল কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯৫-২০০ টাকা কেজিতে এবং সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আজ কারওয়ান বাজারে সোনালি মুরগি ২৭০ টাকা আর ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
মুরগির দাম কমার বিষয় কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মোহম্মদ ফারুক বলেন, ঈদ শেষ হয়েছে বেশিদিন হয়নি। অনেকে ঈদের সময় মাংস কিনে রেখেছেন। সেটা হয়তো ফ্রিজে কিছু আছে। তার ওপর জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, সামনে ঈদুল আজহা, সেজন্য অনেকে টাকা জমাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বিক্রি কমে গেছে। বাজারে মুরগির সরবরাহ ভালো।
এদিকে গত এক মাসে চালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। মানভেদে সরু চাল প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা মোহম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, নাজিরশাইল চাল ৮৫-৯০ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।