আওয়ামী ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন বাতিলের দাবি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জনপ্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা— সচিব বা সচিব পদমার্যাদা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে 'বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম' নামের একটি সংগঠন।
জনপ্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত এই সংগঠনটি ১৯ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
এ বি এম আব্দুস সাত্তার টিবিএসকে জানান, ২০১৮ সালে যুগ্মসচিব থাকা অবস্থায় তাকে তৎকালীন সরকার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে। ওএসডি অবস্থায় তিনি অবসরেও যান। ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগে তিনি সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। বর্তমানে এ বি এম আব্দুস সাত্তার বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসনে কর্মরত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিকপরায়ণ— তাদেরকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে, সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষম্যের শিকার বর্তমানে কর্মরত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা/দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে হবে। বৈষম্যের শিকার এখনও বঞ্চিত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিস্ট দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং করবেন, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ট আমলারা এখনও পদোন্নতি পাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি ২রতম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যুগ্মসচিব করা হয়েছে। সেখানে ব্যাচের শেষ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেলে্— ১৮৫ জন কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে পদোন্নতি পাননি। ফ্যাসিস্ট আমলের জেলা প্রশাসক ছিলেন বা ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রীদের পিএস হিসেবে দায়িত্বপালনকারী অন্তত ২২ জন কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন থেকে আওয়ামী আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের অপসারণ করতে না পারলে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমুলক, পেশাদার ও বৃদ্ধিবৃত্তিক আমলাতন্ত্র, প্রশাসক গড়ে তোলা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা আরও বলেন, জাতির কাঙ্ক্ষিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানের পর – পুরো দেশবাসীর মতো জনপ্রশাসনের বঞ্চিত কর্মকর্তারাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন—এবার নিশ্চয়ই তাদের বঞ্চনার অবসান ঘটবে। সরকারের সিভিল প্রশাসনের প্রত্যেকটি স্তর দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়নের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে।
`প্রশাসনে আওয়ামী দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত সব সুবিধাভোগীর অপসারণ ঘটবে, এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনযন্ত্র গড়ে উঠবে, যা ছিল ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মূল চেতনা। বলাবাহুল্য, বঞ্চিত এসব কর্মকর্তার অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে— প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে কর্মকর্তাদের বঞ্চনার অবসানে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবুও অভ্যুত্থান পরবর্তী আট মাস চলে গেলেও অনেকের বঞ্চনার অবসান হয়নি,' আরও বলেন এ বি এম সাত্তার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এবং সুবিধাবাদীরা এখনো নানা কৌশলে যেমন পদোন্নতি-পদায়ন বাগিয়ে নিচ্ছেন, তেমনি বঞ্চিত-বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে উপদেষ্টাদের বিভ্রান্ত করছেন। কিছু কিছু উপদেষ্টাও দুর্নীতিপরায়ণ আওয়ামী আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের কথা শুনে— বঞ্চিত কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদোন্নতি-পদায়ন না করে, বরং আওয়ামী আস্থাভাজনদের শীর্ষ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ডিও লেটার লিখছেন।
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের উত্থাপিত দাবিসমূহ অবিলম্বে পূরণ করা না হলে— শিগগির কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।