৩০ বছর পর পানি-সংযোগ পাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প

দীর্ঘ তিন দশক পর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কেটে গিয়ে অবশেষে আবাসন গড়ে তোলার পথে এগোচ্ছে সিডিএর প্রথম আবাসন প্রকল্পটি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার থেকে এই এলাকার জন্য সুপেয় পানির সংস্থান করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই ৫১ একর আয়তনের এই আবাসিক এলাকার ৫১৯টি প্লট পানির সরবরাহের আওতায় আসবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা ও সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে কর্ণফুলী আবাসিকে পানির সংযোগ দিতে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রাথমিকভাবে এই অর্থের জোগান দেবে সিডিএ। তবে প্রতিটি প্লট মালিককে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সিডিএকে ৫০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হবে।
ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জ্যারটেক কালারপুল সেতুর নিচ দিয়ে পাইপলাইন বসিয়ে আবাসিক এলাকায় পানি সংযোগ দেওয়া হবে। সিডিএর পে-অর্ডার পেলেই কাজ শুরু হবে।"
"পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে সেখানে ভবন নির্মাণ হবে। ধীরে ধীরে পানির চাহিদাও তৈরি হবে। সেখানে বসতি গড়ে উঠলে দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ লিটার পানির চাহিদা তৈরি হতে পারে। আমরা সেই ধারণা নিয়েই কাজ করছি। এছাড়া, পাম্প হাউজ নির্মাণে ভূমি বরাদ্দ পেতে সিডিএর কাছে আবেদন করেছি," যোগ করেন তিনি।
গত ২১ জানুয়ারি সিডিএর বোর্ড সভায় কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে পানি সরবরাহ বিষয়ে আলোচনা শেষে সিডিএ ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহে সম্মত হয়। এরপর ওয়াসা সাড়ে সাত কোটি টাকার একটি ডিমান্ড নোট দেয়। এ নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তিন দশক আগে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ায় নতুন করে বরাদ্দের সুযোগ নেই। প্লট মালিকরা এই ব্যয় বহন করতে সম্মত হয়েছেন। শুরুতে এই অর্থ সিডিএ ওয়াসাকে দেবে। পরে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিটি প্লট মালিক সিডিএকে ৫০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করবেন। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান হতে যাচ্ছে।"
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে মইজ্জারটেক এলাকায় কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ৫১৯ জনকে প্লট বরাদ্দ দেয় সিডিএ।
তবে তিন দশক পেরিয়ে গেলেও প্রকল্প এলাকায় ভবন নির্মাণ তো দূরের কথা, কোনো নাগরিক সুবিধাই নিশ্চিত করতে পারেনি সিডিএ। ফলে প্লট বরাদ্দ পেলেও দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এলাকা। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্লট মালিকরা। এর মধ্যেই মারা গেছেন প্লট মালিকদের এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি।
প্রায় ৫১ একর জমির প্রকল্প এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি। পুরনো ইটের সড়কগুলোতে বড় গাছের শিকড় উঠে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু প্লটে ছোট ঘর থাকলেও সেখানে নিয়মিত মাদক কারবার চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় কোনো সীমানাপ্রাচীরও নেই। স্থানীয়দের দাবি, মূলত পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণেই এখানে আবাসিক স্থাপনা গড়ে ওঠেনি।
সিডিএর তথ্যমতে, প্রকল্প চলাকালে সুপেয় পানি সরবরাহ নিয়ে ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে চিঠি দেয় সিডিএ। ওই চিঠিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবও স্বাক্ষর করেন। এতে পানি সরবরাহের বিষয়ে ডিপোজিট ওয়ার্ক করার প্রয়োজনীয়তা জানানো হয়।
জবাবে ওয়াসা জানায়, তখন তাদের কোনো পানি সরবরাহ প্রকল্প না থাকায় প্লট মালিকদের পানির সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে ওয়াসা এ ধরনের প্রকল্প নিলে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
২০১৯ সালে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলগুলো—যেমন কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো এবং ইন্দ্রপোলের লবণ কারখানাসমূহে পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ১,৯৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি প্রতিদিন ছয় কোটি লিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম।
এই প্রকল্প থেকেই কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে বলে জানায় ওয়াসা।
কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা প্লট মালিক সমিতির সিনিয়র সহ–সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনের পথে। পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন শুরু হবে। সিডিএ জানিয়েছে, ছয় থেকে আটতলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রকল্পটিকে সবুজ আবাসন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।"