সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা: হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ প্রশাসনের

সুনামগঞ্জে আগামী কয়েকদিন ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় ঢল নেমে হাওর এলাকায় আগাম বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে হাওরের পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অন্তত ৮০ ভাগ বা তার বেশি পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
হাওরের শতভাগ বোরো ফসল কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি অধিদপ্তরের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে হাওরের বোরো ধান দ্রুত কর্তন ও আগাম বন্যায় করণীয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ পওর শাখা-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদসহ জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর শাখা-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার সভায় বলেন, 'আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। বিপৎসীমা অতিক্রম বা বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও হাওর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই হাওরের পাকা ধান দ্রুত কেটে তোলা প্রয়োজন।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, 'জেলার সব হাওরেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত হাওরে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যা গড়ে সাড়ে ৮ ভাগ। শ্রমিকের পাশাপাশি ১৬০টি হারভেস্টার, ১৫টি রিপার দিয়ে ধান কাটা চলছে। বাইরের জেলা থেকেও আরও কিছু হারভেস্টার এসেছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা চলবে। ভারি বৃষ্টির শঙ্কায় হাওরের যেসব জমির ৮০ ভাগ ধান পেকেছে, সেগুলো দ্রুত কেটে তোলার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে—লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯২ হেক্টর বেশি। ১১৬টি জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।