সাবেক হুইপ সামশুল ও তার পরিবারের ৬ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং তার পরিবারের ছয় সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্যাসিনো ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা ও অর্থপাচারের অভিযোগে চলমান অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেয়।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২-এর সদ্য বদলি হওয়া উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'একটি অনুসন্ধান চলছে। আমি যেহেতু বদলি হয়েছি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।'
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে কমিশন। এর অংশ হিসেবে সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসায় সম্পৃক্ততা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অনুসন্ধান চলাকালে এসব ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ পাচারের আশঙ্কায় আদালতে ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন জানায় দুদক।
জব্দ করা ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরী, তার স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী, ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, মেয়ে তাকলিমা নাছরিন চৌধুরী ও তাহমিনা নাসরিন চৌধুরী, ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত এবং মজিবুল হক চৌধুরী নবাব।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর সামশুল হক চৌধুরীর নাম সামনে আসে। অভিযোগ ছিল, তিনি চট্টগ্রামে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে এবং ২৩ অক্টোবর ২২ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাদের মধ্যে সামশুল হকও ছিলেন।
তবে চার বছর পর, ২০২৩ সালের ৮ মে দুদকের তৎকালীন সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে সামশুল হক চৌধুরীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দাবি করা হয়, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এ সিদ্ধান্ত ঘিরে সমালোচনা তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযোগপত্র ছাড়াই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। জনশ্রুতি আছে, পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।
দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আবুল হোসাইন টিবিএসকে বলেন, 'আগামী সপ্তাহে নতুন কর্মকর্তা যোগ দেবেন। এরপর তিনি অনুসন্ধানের বাকি কাজ সমাপ্ত করবেন।'