ইউনূস-মোদি বৈঠক: বাংলাদেশের বিবরণ ‘উস্কানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’—ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি

কেবলমাত্র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বা অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম আজ (৬ এপ্রিল) দাবি করেছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবরণ 'উস্কানিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত'।
নির্দিষ্ট কোনো সূত্র উল্লেখ না করেই এমন মন্তব্য একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথমে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) ও এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে দ্য প্রিন্ট, ইন্ডিয়া টুডে, হিন্দুস্তান টাইমস, ডেক্কান হেরাল্ড ও দ্য ইকোনমিক টাইমসসহ একাধিক মূলধারার ভারতীয় গণমাধ্যমের এভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এমএসএন ডটকমও প্রচার করেছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো কেবল 'অজ্ঞাত সূত্র' কিংবা অজ্ঞাত 'কিছু ব্যক্তির' কথাই উল্লেখ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমগুলি ভারত সরকারের কোনো কর্মকর্তা কিংবা সংশ্লিষ্ট কাউকে উদ্ধৃত করেনি। তবে প্রায় একই ভাষায় লেখা প্রতিবেদনগুলো দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি অফিশিয়াল ব্রিফিং বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের।
ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে গত শুক্রবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বৈঠকের বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়ে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ওই বিবৃতির বিষয়ে 'কিছু ব্যক্তির' প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ড. ইউনূস এবং বাংলাদেশের আগের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যেসব মন্তব্য করেছেন বলে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে– তা 'সঠিক' নয়।
বিশেষ করে শফিকুল আলমের ওই ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে অজ্ঞাত ওই 'সূত্রগুলো' দাবি করেছে— ব্যাংককে মোদি-ইউনুস বৈঠকের বর্ণনা 'উস্কানিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত'।

গত ৪ এপ্রিল, ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের একটি ছবি প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ওই পোস্টে শফিকুল আলম দাবি করেছিলেন, ইউনুস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতের কাছে অনুরোধ জানালে মোদীর প্রতিক্রিয়া 'নেতিবাচক ছিল না'। এমনকি মোদি বলেছিলেন, 'আমরা আপনার প্রতি [ইউনুস] তার [হাসিনা] অসম্মানজনক আচরণ দেখেছি।'
এ প্রসঙ্গে ভারতীয় 'সূত্র' দাবি করেছে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসংক্রান্ত বিষয়ে প্রেস সচিবের বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই।
তারা আরও বলেছে, এমন মন্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিস্ময়করভাবে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এমন 'সূত্র' কোথা থেকে এসেছে—সরকারি না অন্য কোনো মহল থেকে, তা-ও স্পষ্ট করেনি।
এই প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে আগস্টে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
বর্তমানে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে গোপন ও সুরক্ষিত কোনো স্থানে আশ্রয়ে রেখেছে।
গত মাস পর্যন্ত তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে ৭২টি ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে ১৩৭টি ভুয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মোট ১৪৮টি বিভ্রান্তিকর সংবাদ চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি আড়াই দিনে একটি করে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলি।