বিমসটেক সম্মেলনে ইউনূস-মিন অং বৈঠক হলে এজেন্ডায় থাকতে পারে রোহিঙ্গা ইস্যু

আগামী ৩-৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বে অভ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে আগ্রহী।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস চলতি মাসের শুরুতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আগামী বছরের ঈদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। এই আলোচনাকে সে লক্ষ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, সম্প্রতি বেইজিংয়ে ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের [রোহিঙ্গাদের] দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের একটি সূত্র টিবিএসকে জানিয়েছে, 'মিয়ানমার সম্প্রতি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে, বাংলাদেশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, কারণ এটি উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক বিষয়।'
সূত্রটি আরও জানায়, 'যদি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি অবশ্যই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। তবে, থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন যথাসময়ে হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।'
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার হওয়ায় বাংলাদেশ এই বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে আগ্রহী। বৈঠকে অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
এদিকে, রয়টার্স-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠান হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং তিনি উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে আগ্রহী। এটি গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর তার প্রথমবার কোনো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে সফর হতে পারে।
তবে, মিন অং হ্লাইং একাধিক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন এবং আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে তার অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী আসিয়ানের সঙ্গে করা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রধান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করতে চান। ভারতীয় সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা নয়াদিল্লিতে মোদী ও মিন অং হ্লাইংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে, ভারত এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিন অং হ্লাইং সম্মেলনে যোগ দেবেন কি না জানতে চাইলে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর সব নেতা শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চীন সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে শীর্ষ চীনা নেতাদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে চীন ২০১৭ সালের শেষের দিকে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছে। দেশটি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।